আজ ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রায়পুরায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যুতে মামলা

রায়পুরা প্রতিনিধি

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল শ্রীনগরে আধিপত্য বিস্তার ও বাজার দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৬ জন নিহতের ঘটনার দুইদিন পর থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। রবিবার {২৫ আগস্ট) রাতে রায়পুরা থানায় নিহত আমির হোসেন ও বাদল মিয়ার ভাই মো. ইকবাল বাদী হয়ে একটি এবং পরে নিহত ফিরোজা বেগমের ভাই এরশাদ মিয়া বাদী হয়ে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মো. ইকবালের করা মামলায় শ্রীনগরে এলাকয় টেঁটাযুদ্ধ ও সংঘর্ষের মূলহোতা হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে প্রধান আসামী করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামী করা হয়। অপরদিকে এরশাদের করা মামলায় হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে প্রধান আসামী করে আরও ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামী করা হয়।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) প্রবীর কুমার ঘোষ।

এদিকে রায়পুরা থানায় করা দুটি হত্যা মামলার প্রধান আসামী হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে নিয়ে রায়পুরাসহ পুরো জেলা জুড়ে প্রশ্ন উঠেছে “কে এই হানিফ মাস্টার।”

আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রায়পুরার উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবাদের মূল হোতা হিসেবে একাধিকবার আলোচনায় সায়দাবাদ গ্রামের আবু হানিফ জাকারিয়া ওরফে হানিফ মাস্টার (৬৮) এর নাম উঠে এসেছেন। যার সমর্থকদের হামলায় বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) মারা যায় নারী ও কিশোরসহ ৬ জন। এই হানিফ মাস্টারের নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছরে অন্তত ২০ বার শ্রীনগরে টেঁটাযুদ্ধ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রায়পুরা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক হানিফ মাস্টার প্রায় ৪ দশক ধরে বোল পাল্টে সরকারদলীয় নেতাদের আস্তাভাজন হয়ে রায়পুরার চরাঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। বিএনপি জোট সরকারের আমলে দলটির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সুসসম্পর্ক বজায় রেখে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে তার আধিপত্য বজায় রাখে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে খোলস পাল্টা আ’লীগ নেতা সাথে সখ্যতা বাড়িয়ে গড়ে তোলেন নিজম্ব লাঠিয়াল বাহিনী। শ্রীনগর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেলের সাথে হানিফ মাস্টারের সখ্যতা কথা এলাকার সকলেই জানা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুতের পর গিরগিটির মত আবার রং পাল্টায় হানিফ মাস্টার।
সায়দাবাদ বাজার দখলকে কেন্দ্র করে হানিফ মাস্টার গ্রুপের সাথে সাবমিয়া গ্রুপের বিরোধ চলে আসছে। গত ৬ আগস্ট দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটে ঘটনা। এর জেরে বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। যা বুধবার রাতে টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধে রূপ নেয়। রাতভর চলা টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধে বৃহস্পতিবার ভোরে ৪ জন নিহত হন। ওই দিন দুপুরে আবার সংঘর্ষ শুরু হলে গুরুতর আহত অবস্থায় আরও ২ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মারা যান বাদল মিয়া নামে এক ব্যক্তি। অপরজন সিদ্দিক হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান । ওইদিনের ঘটনায় টেঁটা, গুলি ও দেশি অস্ত্রের আঘাতে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বর্তমানে আহতদের মধ্যে ৩৫ জন ঢাকাসহ নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত ৬ জন হলেন– সায়দাবাদ গ্রামের ইসমাইল ব্যাপারীর দুই ছেলে আমির হোসেন (৬৫) ও বাদল মিয়া (৪৫), শাহীন মিয়ার ছেলে জুনায়েদ (১৬), বাঘাইকান্দি গ্রামের সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৩৫), আব্বাস আলীর ছেলে আনিস মিয়া (৩০) এবং একই এলাকার আসাবউদ্দিনের ছেলে সিদ্দিক (২৮)। এর মধ্যে আনিস নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাদল মিয়া এবং নেওয়ার পর সিদ্দিককে মৃত্যু হয়। নিহতরা সবাই ওই এলাকার সাহেব বাড়ির অর্থাৎ সাবমিয়া গ্রুপের সমর্থক।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ জন নিহতের পর সাহেব বাড়ির ফিরোজ মেম্বারের লোকজন আইল্লার বাড়ির হানিফ মাস্টারের লোকজনের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ তোলে।

তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিহতের স্বজনদের দাবী, তারা নিজেরায় তাদের বাড়ির মালামাল সরিয়ে, বাড়ি-ঘরে ভাঙ্চুর চালিয়েছে। তারা আমাদের ছয়জন মানুষকে হত্যা করেছে।

বাদী মো. ইকবাল বলেন, আমরা কোন সংঘাতে জড়াইনি। হানিফ মাস্টারের লোকজন বাড়ীতে ঢুকে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমার বড় দুই ভাই নিহত হয়েছেন। আমি নিজেও আহত হয়েছি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে হানিফ মাস্টারের মোবাইলে ফোন করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রায়পুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) প্রবীর কুমার ঘোষ জানান, নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ভাংচুর, লুটপাট এমন কোন খবর আমরা পাইনি।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ