খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আমরা ক’জন পরিচালিত মেহমানখানায় দুপুরের খাবার খেয়ে খুশির হাসি হেসে বাড়ী ফিরছে সমাজের অসহায় কর্মহীন অনাহারী মানুষেরা। প্রতিদিনই বাড়ছে মেহমানখানার মেহমানের সংখ্যা। শনিবার (৭ আগস্ট) পঞ্চমদিনে মেহমানখানার অপ্যায়িত হয়েছে ৪ শতাধিক মেহমান
প্রতিদিন মেহমানের সংখ্যাবৃদ্ধি খুশি উদ্যোগতা নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাজহারুল পারভেজ মন্টি।
দুপুর ১টা বাজার সাথে সাথে মেহমানখানার মেহমানদের আপ্যায়ন শুরু হয়। এর আগ এখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনির অসহায় কর্মহীন অনাহারীর সমাগম শুরু হয়। মেহমানদের আতিথীয়তা চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। চেয়ার টেবিলে বসে আয়েশ করে খানাপিনা শেষ করে হাসিসুখে ফিরে যান সুবিদাবঞ্চিত এই মানুষগুলো।
দুপুরের খাবার খেতে এসে ষাটোর্ধ্ব মরিয়ম বেগম এই প্রতিবেদককে জানান দ্বিতীয় দিনের মত তিনি এখানে দুপুরের খাবার খেতে এসেছেন। গতকালও তিনি খাবার খেয়ে গেছে। স্বামী সন্তানহীন এই বৃদ্ধ মহিলা খুশির হাসি হেসে জানতে চান প্রতিদিন কি এখানে এসে খাবার খেতে পারবেন কিনা। তিনি দু’হাত তুলে আয়োজকদের জন্য দোয়া করেন।
মো: মাহবুবুর রহমান পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, তিনি গত পাঁচদিন ধরে মেহমানখানায় খাবার খেতে আসছেন। তার হকারি পেশার উপর নির্ভর করে তার স্ত্রী-সন্তানসহ ৫ সদস্যের পরিবারটি চলে।লকডাউনের ফলে তার হকারি ব্যবসা বন্ধ আছে। ধার-দেনা করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে তাদের সংসার চলছে। গত ৫দিন দুপুরে তিনি এখানে এসে খাবার খেয়েছেন। বাড়ী অন্যরা সকালের নাস্তা ১১ টা ১২ টা দিকে খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেয়।তিনি আক্ষেপ করে বলে লজ্জায় বাড়ী অন্যরা এখানে আসেনা। যদি তাদের জন্য নিয়ে যাওয়া যেত তবে তারাও খেতে পারতো।
স্ত্রী আয়শা বেগমের তার ধরে মেহমানখানায় খাবার থেতে আসেন ষাটোর্ধ্ব অন্ধ রাজন মিয়া।ছেলের রোজগারে তাদের ৫ জনের সংসার চলে। কিন্তু বর্তমানে ছেলে বেকার হয়ে বসে আছেন। একদিকে সংসার খরচ অন্যদিকে বাড়ী ভাড়ার জন্য বাড়ীওয়ালার নিত্য দিনের তাগদা বাপ হয়ে যেন সহ্য করতে পারছেনা অন্ধ রাজন মিয়া। তাইতো স্ত্রী হাত ধরে মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। গত ৫ দিনের মধ্যে ৪ দিনই তারা স্বামী-স্ত্রী এখানে এসে খাবার খেয়েছে। তারা মেহমানখানার মেহমানদারিতে সন্তুষ্ঠি প্রকাশে করে আয়োজকদের জন্য দোয়া করেন।
উদ্যোগতা মোঃ মাজহারুল পারভেজ জানান, অধ্যাপক মহসিন শিকদার ও মুকাররম ভুঁইয়াসহ কয়েকজনকে নিয়ে এ মহৎ কাজ করার চিন্তা শুরু করি। গত পাঁচ আমাদের এ কার্যক্রমে অসহায় অনাহারী মানুষসহ সমাজের বিত্তশালীদের মধ্যে ব্যাপক সারা পড়েছে। অনেকেই আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। ইনশাল্লাহ এ দূ:সময় দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
প্রথম দিন গত ৩ আগস্ট মঙ্গলবার এই মেহমানখানার শুভ কাজের উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো:মেহেদী মোর্শেদ।
পঞ্চম দিনে মেহমানখানায় উপস্থিত থেকে এ মহৎ কর্ম পরিদর্শন করেন নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান সোহেল, সিনিয়র সহ সভাপতি মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, এড. জাহিদ, শফিকুল ইসলাম স্বপন, প্রফেসর এ এইচ মিলন অধ্যাপক, মঈনুল ইসলাম মীরু, অধ্যাপক সজীব মিয়া, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডষ্ট্রিজ এর পরিচালক শহীদুল হক পলাশ, প্রভাষক মোঃ সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক নুরুদ্দিন বাদশা ও প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ।