মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু
সবজি চাষে নরসিংদী জেলার দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। বর্তমানে সবজি চাষের পাশাপাশি এ জেলার কৃষকরা সবজির চারা উৎপাদন করে খ্যাতি কুড়াচ্ছে। নরসিংদীর শিবপুরে সবজির চারা উৎপাদন করে ভাগ্য বদলে গেছে প্রায় ১৫০ কৃষকের। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজির চারা উৎপাদন করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া এলাকা কৃষকেরা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নরসিংদীর শিবপুরে গেলে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার কুন্দারপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার মাঠজুড়ে পলিথিনে মোড়ানো বীজতলা। বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন চারা কেনার জন্য। অনেক কৃষক চারা তুলছেন বিক্রয়ের জন্য। কেউ কেউ বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকরা জানায়, শিবপুরসহ নরসিংদীর স্থানীয় কৃষকরা একসময় মুন্সীগঞ্জ থেকে সবজির চারা ক্রয় করে সবজি আবাদ করতেন। প্রায় ২০ বছর পূর্বে নিজেদের প্রয়োজনে সবজি চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদন শুরু করেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। বর্তমানে এ এলাকার কৃষকেরা প্রায় ৩০ বিঘার উপরে জমিতে চারা উৎপাদন করছে। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এই চারা বিক্রয় করে কেউ কেউ হয়েছেন লাখপতি । চলতি মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা তৈরি করে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি চলে আশ্বিন মাসজুড়ে। এ চার মাস সময়কালে একই পলিথিনে মোড়ানো সেড করে ৪/৫ বার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষক ফজলুল হক জানায়, আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ ও টমেটোর বীজ বপন করা হয়। ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে সবজি চাষীদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভাল মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক হজরত আলী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জাতের ফুলকপির চারাসহ নানান সবজির চারা উৎপাদন করে থাকি। ফুলকপি জাতগুলোর মধ্যে আগুনি কপি অর্থাৎ যে কপিটি আগে বের হয় (অগ্রাহায়ন মাসে), সিরাজী কপি, সাতাত্তুর, বরকুলি। তবে বরকুলি জাত একদম নতুন একটি জাত। গত বছর থেকে আমরা উৎপাদন শুরু করেছি।’
কৃষক শওকত আলী বলেন, ‘সাধারণত আমরা কয়েকটি জাতের ফুলকপি, বাধাকপি, বেগুন, মরিচের চারা উৎপাদন করে থাকি। দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর থেকে এসে আমাদের কাছ থেকে চারা কিনে নয় যায়। আমি এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো ও মরিচের চারা উৎপাদন করেছি। ইতোমধ্যেই খরচ উঠে লাভের মুখ দেখেছি। আশা করছি আরও লাখ তিনেক টাকার চারা বিক্রি করতে পারব’
প্রান্তিক কৃষকেরা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেশ কয়েক জন দিনমজুর এখানে কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
দিনমজুর মোস্তফা মিয়া জানান, গত দুই বছর যাবৎ তিনি এই মাঠে কাজ করছেন। এখানে থাকা-খাওয়া ছাড়া প্রতিদিন দেড়শ টাকা মজুরী পায় সে। তার মতন মোট সতের জন শ্রমিক এই মাঠে কাজ করে।
নরসিংদী জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কৃষকরা এসে এসব চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এখানে নরসিংদী জেলাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকার কৃষকরা সবজি চারার ক্রয় করতে আসেন।
চারা কিনতে আসা ক্রেতা হোসেন আলী জানান, তিনি বি-বাড়িয়া জেলার বাঞ্চারামপুর এলাকা থেকে এসেছেন। নরসিংদীর কুন্দারপাড়া থেকে চারা নিয়ে তা রোপন করে ফলন ভালো পাওয়ায় একটু কষ্ট হলেও এখান থেকে চারা নিয়ে যাই। ফলন ভালো উঠলে এতো দূরে এসে চারা কিনে নেওয়ার কষ্ট আর মনে থাকে না। তিনি গত ৭/৮ বছর ধরে এখান থেকে ফুলকপি ও বাধাকপি চারা নিয়ে আবাদ করেন।
শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন, কৃষি নির্ভর নরসিংদী জেলা, সবজি চাষে ইতোমধ্যেই সফলতা লাভ করেছে। শুধু সবজি চাষ নয়, এর পাশাপাশি চারা উৎপাদন করছে এ জেলার কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সবজির চারা উৎপাদনে বিভিন্ন রোগবালা নিধনে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও চারার গুণগত মান কিভাবে ভাল রাখা যায়, বীজ শোধন করা, বীজতলা তৈরী, বীজ রোপন ও চারার পরিচর্যা এসব বিষয়ে আমরা কৃষকদেরকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।