শাহাদাৎ হোসেন
নরসিংদীর মেঘনা নদীতে বালু মহালের নির্ধারিত স্থান ছেড়ে অন্যত্র অবৈধ চুম্বক ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনকরে যাচ্ছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ। অবৈধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নরসিংদী সদর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বি-বাড়িয়া জেলার সলিমগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের সুষ্ঠু নজরদারী না থাকায় অবৈধভাবে চুম্বক ডেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করতে পারছে চিহ্নিত বালু খেকোরা। পাশাপাশি বালু মহলের নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়িয়ে করিমপুর ও আলোক বালি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে বাল উত্তোলন করছে।
জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলাধীন দিলারপুর মৌজায় বালু মহাল ইজারার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যলয় হতে বিগত ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল তারিখে দরপত্র আহবান করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এতে মো. কাইয়ুমের মালিকানাধীন মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ প্রথম হয়ে দিলারপুর মৌজার বালুমহালটি ইজারা নেন।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ১০ নং শর্ত অনুযারী কোনক্রমেই চুম্বক ড্রেজার ব্যাবহার করে বালু উত্তোলন করা যাবে না মর্মে উল্লেখ করা থাকলেও ইজারাদার এই প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ক্রমাগত ১৫ থেকে ২০টি চুম্বক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় বালু মহালের ইজারা নেওয়া হয়েছে সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের দিলারপুর মৌজায়। কিন্তু ইজারাদারি প্রতিষ্ঠান বালু মহলের নির্দিষ্ট সীমানা বাদ দিয়ে করিমপুর ও আলোকবালিসহ পার্শ্ববর্তী সলিমগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রমাগত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে ভাঙ্গনাতঙ্কে পড়েছে নরসিংদী সদর উপজেলাসহ সলিমগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ।
প্রতিনিয়ত চুম্বক ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমিসহ নরসিংদী উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন থেকে বাঁচাতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা। নয়তো আগামী ভাঙ্গনের বিলীন হবে কয়েকশ’ একর ফসলি জমি, বাড়ী-ঘর, স্কুল-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেঘনা নদীতে নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালি ইউনিয়নের নেকজানপুর, গৌরীপুরারচর ও সলিমগঞ্জের মরিচাকান্দি এই তিনটি এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে ১৫ থেকে ২০ টি অবৈধ চুম্বক ডেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে একের পর এক বাল্বহেড ভর্তি করা হচ্ছে।
এ সময় কথা হয় নেকজানপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সাথে তিনি বলেন, বালু মহালের ইজারা নেওয়া হয়েছে দিলালপুর এলাকায় অথচ বালু কাটছে আমাদের নেকজানপুর থেকে। এভাবে ক্রমাগত বালু কাটার ফলে আলোক বালি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পার্শ্ববর্তী করিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ভাঙ্গন আতঙ্কে ভুগছে।এখন শীতকাল চলছে তাই নদীতে পানি কম রয়েছে । তাই এ অবস্থায় আমদের বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে আছি। কখন জানি শুরু হয় সেই ভাঙ্গন।
অবৈধ এই বালু উত্তোলন কাজে কেন এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে বাধা দিচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অপর এক গ্রামবাসী জানায়, কিভাবে প্রতিবাদ করবো? যারা অবৈধ বালু উত্তোলন করছে তারা কতটা ক্ষমতাশালী সেটা কি জানেন? দিনে হাজার টাকা করে দিয়ে বালু মহালের ইজারাদার আলোকবালি ইউনিয়ন বি এন পি নেতা। তাই আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ ইচ্ছা থাকলেও প্রাণ ভয়ে বাধা দিতে পারি না।
এ ব্যাপারে ইজাধারী প্রতিষ্ঠান এর মালিক কাইয়ুম সরকারের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও সে ফোনটি রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে জেলার সিনিয়র এক সাংবাদিক কয়েক দফা ফোন করার পর কথা হয় তার সাথে, এসময় ইজারাকৃত স্থান থেকেই বালু উত্তোলন করছেন বলে তিনি দাবী করেন।
এসময় সাধারণ ড্রেজারের বদলে চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘চুম্বক ড্রেজার দিয়েতো সবাই বালু কাটে।’ সবার কথা বাদ দেন আপনি কাটেন কিনা সেটা বলেন, এমন প্রশ্নের প্রতি উত্তরে ইজারাদার বলেন, ‘না আমি চুম্বক ড্রেজার ব্টিব্যবহার করিনা ।
পরে তিনি জেলার এক সাংবাদিক নেতার নাম উল্লেখ করে তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বলেন।
এব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগেও আমরা একটি অভিযান চালিয়েছিলাম। আবারও অভিযান চালাব। আর এব্যাপারে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে কয়েকদিনের মধ্যে একটি নোটিশ করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।