খাসখবর ডেস্ক
বিবাহের পর সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করা অন্যতম ইবাদত। সংসারে সুখ-শান্তি না থাকলে ধর্মীয় বিষয়াদিও ঠিকভাবে পালন করা যায় না। তাছাড়া দাম্পত্য জীবন সুখ ও শান্তিময় করতে স্বামী-স্ত্রীর রয়েছে বেশকিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। তন্মধ্যে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর রয়েছে বিশেষ ৪টি দায়িত্ব ও কর্তব্য। যা দাম্পত্য জীবনকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে। আর তাহলো-
* দেন-মোহর পরিশোধ করা
বিয়ের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মোহর। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। মোহর নির্ধারণ ও আদায় সাপেক্ষেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে সুন্দর সুসম্পর্ক। একে অপরের জন্য হালাল হয়। তাই বিয়ের পর স্বামীর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো স্ত্রীর সন্তুষ্টি অনুযায়ী তার মোহর পরিশোধ করা। মোহর এত গুরুত্বপূর্ণ যে, মোহর পরিশোধ না করলে কিংবা অন্তত তা পরিশোধের নিয়ত না থাকলে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা জেনা ব্যভিচার বৈ কিছুই নয়।
সুতরাং বিয়ের পর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রথম ও প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে মোহর পরিশোধ করা। এ কারণেই ইসলাম স্বামীর জন্য মোহর দেয়াকে (ফরজ) আবশ্যক করে দিয়েছে। আর তা স্ত্রীর সন্তুষ্টি অনুযায়ী আদায় করা স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
* স্ত্রীর ভরণ পোষণ
সুঃখী ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়া। ইসলাম যেসব কারণে স্ত্রীদের উপর স্বামীর মর্যাদা নির্ধারণ করেছে, তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। আর তা এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)
মনে রাখতে হবে, স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়া আর দেন-মোহর দেয়া এক কথা নয়। কেউ যদি তার স্ত্রীকে যথাযথভাবে ভরণপোষণ দিয়ে থাকে তবে ওই ব্যক্তি মোহর আদায় থেকে মুক্ত নয় বরং তাকে অবশ্যই মোহর আদায় করতে হবে। এ দুটিই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অনত্যম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনো ভাবেই স্ত্রীর জন্য খরচ করা কার্পণ্য করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
> ‘যাকে অর্থ-সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করা হয়েছে (বিত্তশালী) তার কর্তব্য সে হিসেবেই তার স্ত্রী পরিজনের জন্য ব্যয় করবে। আর যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে আয় করে, সে হিসেবেই আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে তার ব্যয় করা উচিত। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককেই তার সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব দিয়ে থাকেন।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৭)
> স্বামী ধনী ও সচ্ছল হলে সচ্ছলতার ভিত্তিতেই স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে হবে আর দারিদ্র হলে দারিদ্রের ভিত্তিতে (ভরণ পোষণ দিতে হবে)।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৪ )
* উত্তম আচরণ করা
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো ভালো আচরণ করা। সদ্ব্যহার করা। মূলত ভালো ব্যবহার ও উত্তম আচরণ পাওয়া স্বামীর উপর স্ত্রীর অন্যতম একটি হক বা অধিকার। এ ভালো ব্যবহারই হচ্ছে সুখী দাম্পত্য জীবনের অন্যতম বন্ধন। তাই স্ত্রীর প্রতি দয়া, সহানুভূতি ও সদাচরণ করবে স্বামী। স্বামী মধুর আচরণের সঙ্গে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে স্ত্রীকে মুগ্ধ করে রাখবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর, উত্তমভাবে জীবন যাপন কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)
হাদিসের পরিভাষায়- ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট আর যে নিজ পরিবারের সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ করে।’
* একাধিক স্ত্রী থাকলে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা
যদি কোনো মুমিন মুসলমানের একাধিক স্ত্রী থাকে তবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো স্ত্রীদের মধ্যে ন্যয় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। প্রত্যেক স্ত্রীর সঙ্গে তুলাদণ্ডে মেপে সমান আচরণ করা ও পূর্ণ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। তারপরও প্রত্যেক স্ত্রীর প্রতি আন্তরিকতার ঘাটতি থাকা যাবে না। কোনো একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়া যাবে না, যাতে অন্য স্ত্রীর জন্য তা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘কোনো একজন স্ত্রীর দিকে এমনভাবে ঝুঁকে পড়ো না যাতে করে অন্যরা ঝুলন্ত হয়ে পড়ে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১২৯)
মনে রাখতে হবে, একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে যদি এতটুকু ইনসাফও কেউ প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে আশঙ্কা করে তবে সেক্ষেত্রে এক স্ত্রীতে সন্তুষ্ট থাকই ইসলামের নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হ্যাঁ’ যদি তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে আশঙ্কা হয়, তবে তোমরা কেবল একজন স্ত্রীই রাখবে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩)
এ ছাড়াও স্বামীরা স্ত্রীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করব। তাহলো-
> সাধ্য অনুযায়ী ওয়ালিমা অনুষ্ঠান করা।
> স্ত্রীর দোষ-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা।
> স্ত্রীর সঙ্গে হাসি-খুশি ও আনন্দদায়ক আচরণ করা। আনন্দদায়ক খেলাধূলা করা।
> লজ্জাশীলতার প্রতি লক্ষ্য রাখা।
> সন্দেহজনক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।
> ভরণপোষণে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।
> স্ত্রীদের দ্বীনি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা।
> কোনো অবাধ্যতা দেখা দেয়া সঙ্গে সঙ্গে তাকে সুন্দর ও কোমল ভাষায় তা বুঝিয়ে দেয়া এবং নসিহত করা।
উত্তম পন্থায় স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করা। এক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলা। যেমন : এ সময় কেবলামুখী না হওয়া, হায়েজ ও নেফাস তথা ঋতুস্রাব মেনে চলা, পবিত্রতা অর্জনের নিয়মগুলো জেনে নেয়া ইত্যাদি।
উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মেনে স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণে দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠবে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। সেখানে কোনো দুঃখ-অশান্তি থাকবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব পুরুষদের স্ত্রীদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে সুঃখী দাম্পত্য জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।