আজ ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাজতি লিজন’র উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

খাসখবর প্রতিবেদক

নরসিংদীতে কারাবিধি অমান্য করে জেলা কারাগারে লিজন মোল্লা (৩০) নামে এক হাজতির উপর রাতে অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

রবিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে এগারোটার সময় নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে নির্যাতিত হাজতির স্বজন ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে লিজনের মা সাজেদা বেগম বলেন,একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় গত ১২ জুন আমার ছেলেকে বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ।আদালতের নির্দেশে একদিন পর তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। গত ১৮ জুলাই জেল হাজত থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত থেকে পূনরায় জেল হাজতে ফিরে গেলে কারারক্ষিরা মোবাইল ফোন খোঁজার নামে তার দেহসহ বিছানার আশপাশ তল্লাশি করে চলে যায়।
পরবর্তীতে রাত গভীর হলে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন জেল সুপার শফিউল আলম‘র নেতৃত্বে কয়েকজন কারারক্ষি লিজনের কাছে যায় এবং আমার ছেলের দুই হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে মুখে কাপড় বেধে অমানুষিক নির্যাতন চালায় বার বার তারকাঁটা দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করে। তার বাম পা ও কোমড়ের একটি হাড় ভেঙ্গে যায় ।অন্য কয়েদির মাধ্যমে জেলখানায় লিজনকে পিটানোর খবর পেয়ে তাকে দেখতে জেলগেটে ছুটে যাই। সেখানে গেলে লিজনের সাথে দেখা করতে জেলা প্রশাসকের নিষেধ আছে বলে আমাদের ফিরিয়ে দেন।
কারাগারে থাকা অন্য হাজতির সাথে দেখা করে জানতে পারি ১৮ জুলাই লিজনের ফেইসবুক আইডি থেকে তার কয়েকটি ছবি পোস্ট হয়।এতে করে কারাগারে লিজন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে সন্ধেহে তাকে মারধোর করেন।

হাজতি লিজনের মা সাজেদা বেগম আরো বলেন, “জেল সুপার বাদী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলার জন্য রাতের আধারে কারাবিধি অমান্য করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। আজ আমার ছেলের জীবন শংকটাপন্ন। আমার ছেলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে”।
এ অবস্থায় তার সুচিকিৎসার জন্য আদালতের কাছে জোড় দাবী জানিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ।জেল সুপার শফিউল আলমকে উদ্দেশ্য করে হাজতি লিওনের স্ত্রী বলেন “কার নির্দেশে,কত টাকার বিনিময়ে আপনি আমার স্বামীর পা ও কোমরের হাড় ভেঙে ফেলা সহ যৌনাঙ্গ তারকাটা দিয়ে ফুটো করেছেন?
এসময় তিনি তার স্বামীর সুচিকিৎসা সহ জেল সুপার শফিউল আলমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য ডিআইজি প্রিজন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লিজনের ছোটভাই লিমন ও এলাকাবাসীর পক্ষে কাজী ইসমাইল খলিল সোহাগ।

এর আগে গত ২০ জুলাই জেল সুপারের অনুমতি পেয়ে নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের প্রতিনিধি দল জেলখানায় গিয়ে লিজনকে মারপিটের কথা জানতে চাইলে জেল সুপার শফিউল আলম মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ১৮ তারিখ তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালতের গারদখানায় মোবাইলের মাধ্যমে তার ফেইসবুকে ছবি পোস্ট দেয়। গারদখানায় লিজন ফেইসবুকে ছবি পোস্ট দিয়েছে এর কোন সি সি ফুটেজ আছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, জেলাপ্রশাসন ও প্রেস ক্লাব বিষয়টি অবগত। বিষয়টা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাহলে জানেন বলে জেল সুপারকে পাল্টা প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি নরসিংদী প্রেসক্লাবের একজন সদস্যের নাম বলেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা ওই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করেন‘ঐ একজন জানলে প্রেসক্লাব কিভাবে জানলো’ তার দিকে এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন, জবাবে তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, ১৮ তারিখ ৩ টার দিকে ওই সাংবাদিক আমার কাছে ফোন করে লিজন কোথায় আছে ,যদি জেলখানায় থাকে তাহলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ফেইসবুক কিভাবে চালাচ্ছে তা জানতে চান।

তিনি আরো জানান, লিজনের জন্য কারাগারে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে। তার কাছে যেকেউ যাচ্ছে তাকেই দেখে নিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এই হুমকিতে অন্যান্য কয়েদিরাসহ ভেতরের সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এসময় সাংবাদিকরা লিজন কেন এমন করছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সহযোগিতা চাইলে জেল সুপার বলেন লিজনের সাথে কারো সাক্ষাৎ করা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) এর নিষেধ রয়েছে। অথচ লিজনকে তখন কাশিমপুর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যা তিনি সাংবাদিকদের সাথে গোপন করে গেছেন।
উল্লেখ্য যে, কারাগারে যাবার আগে প্রতিনিধি টিম লিজনদের বাড়ী গিয়ে জানতে পারে গ্রেফতার হওয়ার আগে লিজন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বাড়ীতেই রেখে এসেছিল। গত ১৮ জুলাই ওই ফোন ব্যবহার করে তার ছোট ভাই লিজনের আইডি থেকেই লিজনের কয়েকটি ছবি পোস্ট দেয়। বর্তমানে ওই মোবাইলটি নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবে গচ্ছিত রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) কাশিমপুর কারাগারের গিয়ে লিজনের সাথে স্বাক্ষাত করে তার স্বজনরা। তাকে দেখে সবাই হতচকিত হয়ে যান। দুইজন কারারক্ষীর শরীরে ভর দিয়ে কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে কোন রকমে দাঁড়িয়ে সে দেখা করতে আসে। এসময় লিজন তার স্বজনদের শুধু বিলাপ করে বলে যাচ্ছিল ‘ আমি আর বাঁচতাম না, আমারে হেরা মাইর‍্যা অচল কইরা ফালাইছে।’

জেল সুপার শফিউল আলমের মোবাইল ফোনে কল করে লিজনকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হেড অফিসের নির্দেশে লিজনকে
কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর হয়। তাকে কোন মারধোর করা হয়নি।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ