খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর রায়পুরার মির্জারচরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল মানিক হত্যায় মামলার এজাহারভুক্ত আরও চার আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রবিবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী শহরের শাপলা চত্বর ও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-১১। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, রায়পুরার মির্জারচর ইউনিয়নের মির্জারচর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে মো. নাসির মিয়া (২৪), দ্বীন ইসলামের ছেলে মো. জুয়েল মিয়া (২২), ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. দুলাল (৩২) ও পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি গ্রামের মৃত শাহ মুরতুজ আলীর ছেলে মো. বাবুল মিয়া (৪৮)।
চেয়ারম্যান মানিক হত্যার ঘটনায় এর আগে দুই দফায় দুটি বন্দুক ও ১০ রাউন্ড গুলিসহ মহরম আলী (৪৮), মো. আব্দুল্লাহ (৩৫), রমজান মিয়া (২৮) ও রাসেল ওরফে এবাদুল্লাহ (৩৫) নামের চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরেই ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল মানিককে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের একসপ্তাহ আগে করা পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে ওই ইউনিয়নের শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি সভা শেষে ফেরার পথে চেয়ারম্যান মানিককে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের আসামীরা। চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই র্যাব সদস্যরা গোয়েন্দা নজরধারী চালাতে থাকে।
পরে র্যাব-১১’র সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন চেয়ারম্যান মানিক হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের কয়েকজন নরসিংদী শহর ও মাধবদী এলাকায় আত্মগোপনে আছেন। তাদের অবস্থান শনাক্ত শেষে রবিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত র্যাব-১১’র দুটি পৃথক দল নরসিংদী শহরের শাপলা চত্বর ও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকার দুইটি বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় শাপলা চত্বর থেকে মো. নাসির মিয়া ও মো. জুয়েল মিয়া এবং মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মো. বাবুল মিয়া ও মো. দুলালকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা চেয়ারম্যান মানিক হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন জানান, গ্রেফতার চারজনকে এরই মধ্যে মামলার তদন্তকারী সংস্থা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে রায়পুরার মির্জারচর ইউনিয়নের শান্তিপুর বাজার এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে দুর্বৃত্ত্বের ছোড়া গুলি বিদ্ধ হন চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল মানিক। পরে স্থানীয় গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানকে দ্রুত উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মো. জাফর ইকবাল মানিক রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের পরপর দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুইদিন পর নিহত চেয়ারম্যানের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামে উল্লেখ করে রায়পুরা থানায় মামলা করেন।