হারুনূর রশিদ
দৃষ্টিশক্তি নেই, তবু হার মানেননি মো. ফারুক (৩২)। জন্মান্ধ হয়েও লড়ে গেছেন দারিদ্র্য ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে। অক্লান্ত পরিশ্রমে অর্জন করেছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স (এমএ) ডিগ্রি। কিন্তু শিক্ষার এত উচ্চ শিখরে উঠেও জীবনের বাস্তবতা তাকে করেছে নিরাশ—চাকরি না পাওয়ায় দিন কাটছে হতাশা আর অনিশ্চয়তায়।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার বড়চাপা ইউনিয়নের জামালপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো. মোস্তফা মুন্সীর ছেলে ফারুক। পরিবারের আট সদস্য নিয়ে জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস তার। শিক্ষার প্রতিটি ধাপই ছিল একেকটি সংগ্রামের অধ্যায়—চট্টগ্রামের মুরাদপুর অন্ধ বিদ্যালয়ে শুরু, এরপর ঢাকার জানে আলম খিলখেত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি, বড়চাপা মহাবিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এইচএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে ২০১৭ সালে অনার্স এবং ২০২০ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
ফারুক বলেন, “আমি দৃষ্টিহীন মানুষ, কিন্তু মেধাহীন নই। প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাস্টার্স পাস করেছি—তবুও শুধু চোখ না থাকার কারণে চাকরি পাচ্ছি না। আমার একটাই স্বপ্ন, একটি সরকারি চাকরির মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে থাকা। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন, আমাকে যেন একটা সুযোগ দেওয়া হয়।”
তার বাবা মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, “আমি গরিব কৃষক মানুষ। ছেলের পড়ালেখার পেছনে অনেক কষ্ট করেছি। সরকার যদি তার যোগ্যতা দেখে একটা চাকরি দিত, তাহলে আমাদের মতো পরিবারের ভাগ্য বদলাত।”
চাচা রবিউল আউয়াল বলেন, “ছেলেটা জন্মান্ধ হয়েও যা করেছে, তা আমাদের গর্ব। একটা চাকরি পেলে সে নিজে নয়—আমাদের পুরো গ্রাম গর্বিত হবে।”
ফারুকের শিক্ষক মাওলানা শাফায়েতউল্লাহ বলেন, “রাষ্ট্র যদি সামান্য সহানুভূতি আর ন্যায়বোধ দেখায়, তাহলে ফারুকের মতো তরুণরা সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, “ফারুক আমাদের এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। সরকার যদি তাকে একটা সুযোগ দেয়, তাহলে সে সমাজে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।”
স্থানীয় নারী নূরজাহান বেগমের ভাষায়, “ছোটবেলা থেকেই ফারুক মেধাবী। তার জীবনের লড়াই আমাদের তরুণদের প্রেরণা দেয়। এখন শুধু দরকার রাষ্ট্রীয় সহায়তা—একটি চাকরি পেলেই তার জীবন নতুন আলোয় ভরে উঠবে।”
সমাজের অনেকেই মনে করেন—সরকারের সামান্য সদিচ্ছাই ফারুকের জীবনের অন্ধকারে আলো জ্বালাতে পারে।