খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুণ অর রশিদ খানকে হত্যা করার উদ্ধেশ্যে গুলি করে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে কর্মী সমর্থকরা। ফলে প্রায় ৫ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। শনিবার ভোর সাড়ে ৬টায় শিবপুরস্থ বাসভবনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
জানা যায়, শনিবার ভোরে শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ খান ফজরের নামাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে কতিপয় নেতাকর্মীর সাথে দেখা হয়। তিনি তাদের সাথে কথা বলার জন্য বাড়ীর ভিতরে তিনতলায় তার একান্ত বৈঠকখানায় নিয়ে যান। সেখানে তিনি তাদের জন্য চা-নাস্তা আনতে বাড়ীর লোকজনদের ডাকতে ভিতরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেই পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা তাকে পিছন দিক থেকে দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে। গুলির শব্দ শুনে বাসার ও আশপাশের লোকজন দ্রুত বের হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এলাকাবাসী জানান, ভবনের তিন তলায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন উপজেলা চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ খান। দ্বিতীয় তলায় প্রাইম ব্যাংকের কার্যালয়। প্রধান ফটকে কেচি গেট এবং বাড়িটি সিসি ক্যামরার আওতায় রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকেরও সিসি ক্যামেরা রয়েছে। থানার অতি সন্নিকটে এমন একটি সুরক্ষিত স্থানে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ ও গুলিবর্ষণের ফলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে শত শত নেতাকর্মী শিবপুর থানা ঘেরাও করে। শহরের বিভিন্ন সড়কে টায়ার ও কাঠে আগুন লাগিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া ঢাকা-মনোহরদী সড়কের শিবপুর কলেজ গেট, শিবপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দেয়। এতে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শত শত উত্তেজিত নেতাকর্মী পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ‘হারুন খার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ স্লোগান দিয়ে মিছিলে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো শিবপুর।
পরে উত্তেজিত জনতা নরসিংদী জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন খান নিপুনের নেতৃত্বে সকাল ৯ টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় নরসিংদীর মাধবদী থেকে মরজাল পর্যন্ত শত শত যাত্রী বাহী দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন গণ পরিবহন আটক পড়ে যাত্রীরা দূর্ভোগের শিকার হন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম ইটাখোলায় যান।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নঈম মোহাম্মদ মারুফ খান জানান, ঘটনাটি জানার পর থেকে আমি পুলিশ সুপার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করি। ইটাখোলায় বিক্ষোব্ধ জনতা টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ সুপারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল ইটাখোলায় পৌছে বিক্ষোব্ধ জনতার দাবীর প্রেক্ষিতে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যেমে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানালে তারা দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন শিবপুর উপজেলার পুটিয়া বাজারের ইজারা নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরিফ উপজেলা চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ খানের উপর ক্ষুব্দ ছিলো। এরই জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এঘটনায় আরিফের ছোট ভাই ফরিদকে গ্রেফতারের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে বলেও জানান তারা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত্র কাউকে গ্রেফতারের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঞা রাখিল এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহসীন নাজির বলেন, আমি কখনোই হত্যার রাজনীতিকে সমর্থন করি না। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তারা ছাড় পাবেনা।
শিবপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ২০১৪ সালের মাহিন হত্যাকান্ড এবং ২০১৮ সালে মিলন হত্যাকান্ড ঘটিয়ে যারা আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের ছত্র ছায়ায় আজকের এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মূলত ওই দুটি হত্যাকান্ড ও আজক্রে এই ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যেই শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ খানকে গুলি করেছে। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের অসীম দয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।
নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন বলেন, এ ঘটনাটিকে আমি দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল বলে মনে করিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়না। তিনি আরো বলেন ১৯৮৬ সালে তার বড় ভাই তৎকালীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান কিরণকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিএন্ডবি ব্রিজে গুলি করে হত্যা করে। আমি মনে করি তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানকে যারা গুলি করেছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।