খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর মেহেরপাড়া পূর্ব শত্রুতার জেরে রাতের আধারে বাড়িঘর ভাঙচুর, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করেছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীরা। এসময় সন্ত্রাসীদের ব্যাক্তিকে মারধরের কয়েকজন আহত হয়।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার দিকে নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন মেহেরপাড়া ইউনিয়নের উত্তর কবিরাজপুর এলাকার আনোয়ারা বেগম ওরফে আনুর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় ওই রাতেই ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আহতরা হলেন- বাড়ির মালিক আনু(৫৫), তার ভাতিজা জামাল(৩৮) ও নাতি ওয়াসিম (২০) সহ কয়েকজন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে সদর উপজেলার পাঁচদোনা বাজার সংলগ্ন ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিত হওয়ার কথা শুনে এলাকার লোকজন এসে ভীড় জমাতে থাকে। প্রত্যদর্শী হিসেবে সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দেন।
এলাকাবাসী জানায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে মিজানুর রহমান মিজান ইউপি সদস্য প্রার্থী হয়েছিল। ওই নির্বাচনে আনোয়ারা বেগম আনু ও তার স্বজনরা তার নির্বাচন না করায় নির্বাচনের পর থেকে মিজানের ছেলেরা আনু বেগম তার স্বজনদের সাথে শত্রুতা শুরু হয় বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে হয়রানি করে। এরই জের ধরে গত শুক্রবার রাতে মিজানের ছেলে মামুন ও মেহেদীর নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আনু আপার বাড়িতে হামলা চালায়। পরে আমরা উপায়ন্তর না পেয়ে মসজিদের মাইকে ডাকাত বলে ঘোষণা দিলে তারা পালিয়ে যায়।
পরে বিষয়টি ভুক্তভুগি আনু বেগমের পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইউসুফকে অবগত করলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে রাতেই মাধবদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের আনু বেগম।
বাড়ির মালিক আনোয়ারা বেগম আনু বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে চর দাউদপুর এলাকার মিজানুর রহমান মিজানের ছেলে মামুন(২৫) ও মেহেদী (২২) এর নেতৃত্বে একই এলাকার শাহজাহানের ছেলে শাহিন (১৯), কবিরাজপুর এলাকার হাছেন আলীর ছেলে শামিম (২৪), শাহিন (২০) ও নাগের হাট এলাকার জিন্নত আলীর ছেলে ফয়সাল (১৮) শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী মিলে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় তারা ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। আলমারির চাবি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে আমার গলার হার ও আলমারিতে থাকা গহনা সহ পৌনে ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় আমি ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করলে আমার ভাতিজা জামাল ও নাতি ওয়াসিম এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও মারধর করে। পরে এলাকাবাসী আমাদের বাড়িতে ডাকাত আক্রমণ করেছে বলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে তারা পালিয়ে যায়।
মিজান ও তার সন্ত্রাসী ছেলেদের ভয়ে বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় আহত ব্যাবসায়ী জামাল বলেন, মিজানের ছেলে মামুন ও মেহেদীর নেতৃত্বে আসা সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ফুফু আনুকে মারধর করে ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি এগিয়ে আসলে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে বেধড় মারধর শুরু করে। তারা মেহেরপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের মদদ পুষ্ট হয়ে আমাদের হয়রানি করে আসছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মামুন ও মেহেদী বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায় নি। এসময় তাদের পিতা মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাতেই পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইউসুফের কাছ থেকে আমি মারধরের বিষয়টি শুনেছি।
তবে লুটপাটের বিষয়টি সত্য নয়। রাস্তার পাশের জমিতে গাড়ি পার্কিং এর চাঁদা আদায় সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এঘটনা ঘটেছে বলে ও জানান তিনি।
পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইউসুফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এবিষয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তারা রাতেই মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে অভিযোগের কপি এখনো আমার হাতে পৌঁছেনি। কাগজ হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ও জানান তিনি।