খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর মাধবদীতে ফার্মেসি মালিকের দেওয়া ভুল ওষধ খেয়ে হাজী আব্দুল মজিদ মুন্সি নামে এক রোগীর মৃত্যূর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি হাজী আব্দুল মজিদ মুন্সির মৃত্যূতে নরসিংদী সদর উপজেলার আব্দুল্লা বাজারের মা ফার্মেসি মালিক আরিফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।
হাজী আব্দুল মজিদ মুন্সি মাধবদী থানার নগরবানিয়াদী গ্রামের কাজী জয়নালের পিতা। এদিকে পিতার মৃত্যুর পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তার ছেলে জয়নালের সাথে ফার্মেসি মালিক আরিফের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপোষ মীমাংসা করে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে নিহতের লাশ দাফন করা হয়। দাফনের এক সপ্তাহ গত হলেও ফার্মেসি মালিক আরিফ তার ওয়াদা অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় বুধবার (২৫ জানুয়ারি) এ নিয়ে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারকে নিয়ে বাজারে বসে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমাধান করলে এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত কিছুদিন পূর্বে হাজী আব্দুল মজিদ মুন্সির থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখালে চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ওষধ লিখে দেন। পরে বাড়িতে এসে ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে স্থানীয় আব্দুল্লা বাজারের মা ফার্মেসি মালিক আরিফ’র কাছ থেকে ওষধ এনে তার দেওয়া নিয়মানুসারে প্রতিদিন ২টি করে ট্যাবলেট খাওয়ানো শুরু করে। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ওই ওষধ খাওয়ার পর রোগীর অবস্থা আরো জটিল আকার ধারণ করে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে পুনরায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসকের লেখা ওষধ সেবনের পর রোগীর অবস্থা জটিল হয়েছে বলে জানান। এসময় চিকিৎসক তার লেখা ওষধ খেয়ে রোগীর এমন পরিস্থিতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানান এবং রোগিকে খাওয়ানো ওষধের পাতা ও ব্যবস্থাপত্র দেখাতে বলেন। পরে তাদের দেখানো ওষধ দেখে চিকিৎসক আৎতকে উঠেন।
ফার্মেসি মালিক রোগীকে চিকিৎসকের লেখা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষধ না দিয়ে বরং ক্যান্সারের ভুল ওষদ দৈনিক ২টি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিলে রোগীর এঅবস্থা হয়। পরে ওই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত ঢাকা পাঠিয়ে দেন। ঢাকায় একদিন চিকিৎসা শেষে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে রোগীকে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দিলে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে আটটার দিকে আব্দুল মজিদ মুন্সির মৃত্যু হয়। পরে নিহতের ছেলে জয়নাল এ বিষয়ে ফার্মেসি মালিকের সাথে কথা বলে দুজনে আঁতাত করেন। এবিষয়ে জয়নাল কাউকে কিছু না জানিয়ে পরদিন শুক্রবার তার পিতার দাফন সম্পন্ন করেন।
এব্যাপারে ফার্মেসি মালিক আরিফ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, থাইরয়েড ও ক্যানসারের ওষধ দুটির নাম প্রায় কাছাকাছি। তাই আমি ভুলবশত: একটা ওষদের স্থলে অন্য আরেকটি দিয়ে ফেলেছি। কয়েক বার ওষধটি নেওয়ার পরেও বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। তবে এব্যাপারে নিহতের পরিবারের সাথে বসে আপোষ মীমাংসার আলোচনা চলছে। বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ দু’একদিনের মধ্যে তাদের সাথে বসে সমাধান করে দিবে বলে জানান তিনি।
টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী জয়নাল ভুল ওষধ প্রয়োগের বিষয়টি মোবাইল ফোনে স্বীকার করে বলেন, টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে আপনারা যা শুনেছেন তা সঠিক নয়। ফার্মেসি মালিক তার অপরাধ ঢাকতে আপনাদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। তিনি তার পিতার কুলখানির পর পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে বসে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান।