রায়পুরা প্রতিনিধি

নরসিংদীর রায়পুরায় মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে একই স্কুলে তৃতীয় দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর ) দুপুর ১টায় উপজেলার বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয়বারের মত এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক আগুন নেভায় শিক্ষকরা। এ ঘটনায় বড় ধরনের কোন ক্ষতি না হলেও শিশু শ্রেণির একটি পর্দা ও পাপোস পুড়ে যায়।

এদিকে আড়াই মাসে একই স্কুলে তিনবার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করলেও গ্রেফতার কিংবা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি থানা পুলিশ।
এদিকে একই স্কুলে তৃতীয়বারের মত অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো আজিজুল রহমান, শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দফায় দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তারা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত আড়াই মাসে তিন দফা আগুন লাগাসহ একবার চুরির ঘটনা ঘটে। গেল ৩ ও ২২ সেপ্টেম্বর দুই দফা দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে স্কুলের অফিস কক্ষে থাকা দুটি আলমিরা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এসব ঘটনায় প্রধান শিক্ষক রায়পুরা থানায় অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ স্কুলটি পরিদর্শন করে।
পরপর দুইবার আগুনের ঘটনায় বদলি করা হয় স্কুলের দপ্তরীকে। আগের দুটি অগ্নিকান্ড সন্ধ্যার পর ঘটলেও তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার অগ্নিকান্ডের ঘটে দুপুর ১ টায়। বার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতবাক শিক্ষক ও ম্যানেজিংকমিটির সদস্যরা। দুপুরে শিশু শ্রেণির ওই কক্ষের জানালার একটি পর্দা ও ফ্লোরে থাকা পাপোসে আগুন লাগে। পরে শিক্ষকরা বিষয়টি টের পেয়ে তাৎক্ষিক আগুন নেভায়। এ সময় শ্রেণিকক্ষে কোন শিক্ষার্থী ছিলেন না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। আগুনে পর্দার আংশিক ও একটি পাপোশ পুড়ে যায় বলে জানান সহকারী শিক্ষকরা।

সরেজমিনে বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা যায়, আগুন লাগার কক্ষের পুড়ে যাওয়া পর্দার ঠিক ওপরে ছিল বিদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ও সুইচ বোড। যা অক্ষত আছে। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত তা জানাতে পারেননি স্কুলের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি প্রধান শিক্ষক তাহমিনা সরকার। চুরিসহ তিনবার স্কুলে আগুন লাগার রহস্য উন্মোচন করে জড়িতদের বিচার দাবি করেন স্থানীয় আব্দুল কাইয়ুমসহ এলাকাবাসী।

পরবর্তীতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা সরকার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি স্কুলে ছিলাম না, কে বা কারা লাগিয়েছে তা বুঝতে পারছিনা। পূর্বের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজকের ঘটনায়ও থানায় মামলা দায়ের করবো।
বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি খন্দকার শাহাদত হোসেন বলেন, চুরি ও একাধিক বার আগুন লাগার রহস্য আমরা উদযাটন করতে পারিনি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছেন এ তথ্য আমার জানা নেই। মঙ্গলবার দুপুরে আগুন লাগার ঘটনা জানতে পেরে স্কুলে আসি। কোন সভ্য লোক স্কুলে আগুন দিতে পারে তা আমার জানা নেই। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
রায়পুরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন বলেন, অগ্নিকান্ডের খবরে ওসি সহ স্যারকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। এঘটনা তেমন কোন ক্ষতি না হলে ছোট করে দেখার কিছু নেই। এব্যাপারে পূর্বেই থানায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ওসি সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তাছাড়া আমাদের বিভাগীয় তদন্তও করা হচ্ছে। কে বা কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত এবং কেন বার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটচ্ছে তা বের করা সম্ভব না হলেও আমরা আজকের ঘটনার পর ওপর মহলকে অবগত করেছি এবং পূণরায় বিভাগীয় তদন্তের দাবী জানাই।
রায়পুরা থানার ওসি মো আজিজুল রহমান বলেন এব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন বলে. বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন লাগার খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এর রহস্য উদঘাটন করতে থানা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। এর আগে এই স্কুলটিতে আরও দুইবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানা মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করছে।