মোঃ শাহাদাৎ হোসেন রাজু, খাসখবর প্রতিবেদক
`নদী দূষণ’ নরসিংদীতে একটি প্রচলিত শব্দ। শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলার ছয়টি নদী শিল্প কলকারখানার বর্জ্যে প্রতিনিহত দূষণের শিকার হচ্ছে। নরসিংদী শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া হাড়িধোয়া নদীর পুন:খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু নদী খননের এসময়েও কমছেনা দূষণ। মিলকারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি, বাজারের পরিত্যক্ত ময়লাসহ নদী পাড়ের মানুষ নির্বিচারে নদীতে ফেলছে আর্বজনা। এতে চরম ভাবে দূষিত হচ্ছে নদী ও পরিবেশ। অস্তিত্ব বিলীনের পথে মিঠা পানির মাছ।
জানায় ২০১৮ সালে নরসিংদীর ছয়টি নদী, আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোয়া, ব্রক্ষপুত্র, পাহাড়িয়া, মেঘনা ও পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদীর পুন:খনন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু করা হয়। বর্তমানে তা চলমান রয়েছে। প্রায় কিছু মাস আগে শহরের হাড়িধোয়া নদী দূষণমুক্ত করতে কাজ করা হয়। কিন্তু এরপরও কমেনি দূষণ। পুরাতন থানার ঘাট থেকে হাজিপুর ব্রিজ, নরসিংদী বড় বাজার, বীরপুর, আরশিনগর এলাকায় চারপাশ থেকে হাড়িধোয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। পাশাপাশি করখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল পানিতে মিশে একাকার হচ্ছে।এলাকাগুলোর অংশে হাড়িদোয়া নদীর পানি দূর্গন্ধ যুক্ত আর ময়লা ও বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত এর পানিরা রং খুবই বিশ্রী।
হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নরসিংদী বাজার। এ বাজারে প্রায় ২ হাজারের উপর দোকান রয়েছে। বাজারের এ সকল দোকানপাট থেকে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। পরিত্যক্ত ময়লা আবর্জনা নদীর পাড়ের বিভিন্ন অংশে বিশাল জায়গাজুড়ে ছোট-বড় টিলার মতো স্তুপ হয়ে আছে। মুরগির রক্ত, বিষ্টা, পলিথিনে মুড়া পঁচা তরকারিসহ নানা আবর্জনা।
এছাড়াও প্রতিদিন নদীর পাড়ের মানুষ তাদের বাসা-বাড়ি থেকে নদীতে ময়লা ফেলছে। যার কারণে পূণরায় নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নদীর পাড় দখল করে কিছু ঘরবাড়িও তৈরি হয়েছে।
অপরদিকে হাড়িধোয়া নদীতে শহরের ছোট বড় মিলকারখানার বিষাক্ত কেম্যিকেল যুক্ত বর্জ্য, পানি এসে পড়ছে। মিশে যাচ্ছে নদীর জলের সাথে। সচ্ছ পানি এখন আলকাতার মত রং ধারণ করেছে। প্রাণ হারাচ্ছে জলজ প্রানী। অস্তিত্ব বিলীনের পথে মিঠা পানির মাছ। বিষাক্ত নদীর পানি মানুষের ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। বাড়ছে দূষণ, ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-ব্যাধি।
হারাধন দাস নামে নরসিংদী বাজারের এক ব্যবসা বলেন, আগে এতো কলকারখানাও ছিলো না নরসিংদীতে এতো মানুষের বসবাসও ছিলনা। সে সময় হাড়িধোয়ার পানি একদম সচ্ছ ছিল আমারা প্রতিদিন এ পানিতে গোছল করতাম। আর হাড়িদোয়ার মাছ খুব সুস্বাদু ছিল। এখন তো মনে হয় এ নদীতে কোন মাছই নেই। বিষাক্ত বর্জ্যে সব মরে গেছে।
জুবায়ের হোসেন নামে একজন বলেন, মাঝে মধ্যে বাজারের পাশে হাজীপুরের এই ব্রিজে একটু বাতাস খেতে আসি অনেক সময় বাতাসে ভেসে আসে নদীর পানির পচা দূর্গন্ধ।।
মাদব সাহা নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিনিহত দূষিত হচ্ছে হাড়িধোয়ার পানি। একদিকে কলকারখানার বিষাক্ত ক্যামিক্যাল যুক্ত রং মিশ্রিত পানি অপরদিকে এই বিশাল বাজারে ময়লা আর পচা জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে হাড়িদোয়ায়। তাছাড়া এ এলাকার মানুষের বাড়ী-ঘরের ময়লা আবর্জনা আছেই। নদীপাড়ের মানুষগুলো যেন নদী দূষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
নরসিংদী বাজার থেকে নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধে বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, আমরা নদী ময়লা আবর্জানা ফেলা বন্ধে সকল ব্যবসায়ীদের ডেকে সভা করেছি। যেখানে ব্যবসায়ীদেরন কাছ থেকে প্রশ্ন ওঠে বাজারের এই ময়লা তাহলে কোথায় ফেলা হবে। এব্যাপারে পৌর মেয়রে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া সাময়িক ভাবে নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধে বেড়িবাঁধের উপর বাঁশ বেধে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছি কিন্তু সেটাও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
নরসিংদী পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, কোন ভাবেই নদীতে ময়লা ফেলা যাবে না। পৌরসভার দেয়া নির্দিষ্ট স্থানে সবাইকে ময়লা ফেলতে হবে। তিনি বলেন, যদি কেউ শহরের পরিবেশ নষ্টে এ নিয়ম অমান্য করে তবে পৌর বিধান মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নরসিংদী সুধী সমাজসহ সকলের চাওয়া নদী দূষণ মুক্ত হয়ে আবার হাড়িধোয়া তার আগের রূপে ফিরে আসবে। তার জন্য প্রয়োজন সুনিদিষ্ট উদ্যোগ।