খাসখবর প্রতিবেদক
করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবার হাত থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখতে গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় রয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ। কিন্তু নরসিংদীবাসীর জন্য এ লকডাউন যেন অনন্য এক উৎসবের সুযোগ করে দিয়েছে! নরসিদংদীর বথুয়াদী, গাজির গাঁও,দড়ি গাজির গাঁও ও মেঘনা বাজার এলাকার মেঘনা নদী বিধৌত বেড়িবাঁধ এলাকা এখন লকডাউন উৎসবে মুখরিত।
করোনার এ ভয়াবহ সময়ে কোন ধরনের স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে এমনকি মাস্ক পরিধান না করে শিশু-কিশোর,যুবক-যুবতী তথা সকল শ্রেনী পেশার মানুষ অঘোষিত এক ভয়ানক প্রাণঘাতী উৎসবে মেতে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা বাজার থেকে শুরু করে দড়ি গাজির গাঁও, গাজির গাঁও,বথুয়াদী ও নরসিংদীর সুইচ গেইট এলাকায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ এলাকায় যেন গণমানুষের ঢল নেমেছে। সকাল থেকে লোকজনের সমাগম স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও বিকেল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকজনের সমাগম বাড়তে থাকে এবং সন্ধ্যা হতেই পুরো বেড়িবাঁধ এলাকা জনসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। অনেকে আবার বড় বড় সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে নদীতে ঘুরে বেড়ানোর ছলে উদ্দাম নৃত্যে মেতে উঠে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে একাধিকবার জেল জরিমানা করার পরও এ গণজোয়ার কোন ভাবেই রোধ করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে পুরো বেড়িবাঁধ এলাকায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বেড়িবাঁধ এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। দেশের কোথাও করোনা ভাইরাস নামক মহামারীর অস্তিত্ব রয়েছে কিনা এখানে আসলে তা বুঝার কোন উপায় নেই।করোনায় আক্রান্তের দিক দিয়ে নরসিংদীবাসি ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে। নরসিংদীর ৮০ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড হাসপাতাল ইতিমধ্যেই তার প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রেখেছে।ফলে ইতিমধ্যেই কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আর কোন রোগী ভর্তি না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। করোনার এ ভয়াবহ সময়ে এধরনের লোক সমাগম জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বথুয়াদী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস যদিও প্রথমে শহরকেন্দ্রিক ছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শহর-বন্দর পেরিয়ে গ্ৰামে ও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।এমনিতেই গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পড়তে অনীহা, তারউপরে,ঈদ পরবর্তী সময়ে আমাদের এলাকায় দূর দুরান্ত থেকে আগত লোকজনের অতিরিক্ত ঘুরাঘুরি আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে এখনি তাদের থামানো উচিত।তা না হলে তাদের মাধ্যমে পুরো বেড়িবাঁধ এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়বে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মোঃ হারুন মিয়া বলেন,মেঘনা নদী সংলগ্ন বথুয়াদী বেড়ীবাঁধ একটি দর্শনীয় স্থান। বিভিন্ন এলাকা হতে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত শত শত নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা ও শিশুসহ অভিভাবকদের সাথে সময় কাটাতে এখানে চলে আসেন। আশেপাশে এলাকা থেকে উঠতি যুবকরা পিকনিকের নামে বাদ্যযন্ত্র, হাই সাউন্ড সিস্টেম স্পিকার বাজিয়ে নাচানাচিতে মগ্ন থাকে। সেখানে তারা সামাজিক দূরত্বতো দূরের কথা ,কারও মুখে নেই মাস্ক, নেই কোন স্বাস্থ্যবিধি।এমন পরিস্থিতিতে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মহা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানান, সচেতন নাগরিকরা যদি এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা না নেন তাহলে দুর দুরান্তের লোকজন দ্বারা অত্র অঞ্চল করোনা মহামারীতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি শতভাগ। তাই করোনা মহামারীতে এধরনের লোক সমাগম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নরসিংদী জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন, মাধবদী থানা পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।