আজ ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রায়পুরায় দেবরের দেওয়া আগুনে দগ্ধ সেই নারীর মৃত্যু

খাসখবর প্রতিবেদক

নরসিংদীতে সাবেক দেবরসহ স্বজনদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার একদিন পর মারা গেছেন স্বামী পরিত্যক্তা এক সন্তানের জননী পারভীন আক্তার (৩০)। সোমবার (৯ আগষ্ট) ভোর ৪টায় ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তার মৃত্যু হয়। এদিকে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের দাবী তাদের কেউ অগিদগ্ধের ঘটনায় জড়িত নয়। তাদেরকে ফাঁসানোর জন্যই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে।

নিহত পারভীন শরীরের ৭৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পোড়া নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিহতের ভাই আক্রাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত পারভীন আক্তার রায়পুরার মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের সাবেক স্ত্রী ও একই উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের দানা মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও অগ্নিদগ্ধ নারীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর পূর্বে উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের পাহাড় মরজাল এলাকার সাফিউদ্দিন মুন্সির ছেলে জাকির হোসেনের সঙ্গে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের সোবাহানপুর এলাকার দানা মিয়ার মেয়ে পারভীন বেগমের বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঝিমি নামে ১০ বছরের একটি কন্যা রয়েছে। স্বামী প্রবাসে থাকায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কারনে-অকারনে পারভীনকে নির্যাতন করে আসছিল। গত একবছর আগে দেবর আলী হোসেন ওই গৃহবধূর মেয়ে ঝিমিকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। পরে এ ঘটনায় দেবর ও শ্বশুরকে আসামি করে মামলা করেন পারভীন। এরপর মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মামলা তুলে না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে পারভীনের প্রায় ৮ মাস আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে ওঠে পারভীন। শনিবার (৭ আগষ্ট) দুপুরে টিকা দেওয়ার কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন সাবেক শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ওইদিন সিএনজি অটোরিকশায় বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির শেষে রাত ১০টার দিকে দেবরসহ চারজন তার মুখ বেঁধে লোচনপুর এলাকার একটি নির্জন বাঁশঝাড়ের নিচে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর পর তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করেন। সেখানে ভর্তি করার একদিন পর চিকিৎসারত অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছোট ভাই আক্রাম হোসেন বাদী হয়ে রবিবার (৮ আগষ্ট) দুপুরে রায়পুরা থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরমধ্যে পুলিশ মামলা আসামী মরজাল এলাকার হাফিজ উদ্দিন মুন্সীর ছেলে নিহত পারভীনের সাবেক দেবর আলী হোসেন (৩২) এবং তার ভাগনে কাজী আলতাফ হোসেনের ছেলে মো. শাহরিয়ার (১৮) এ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার গ্রেপ্তারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

নিহতের ভাই আকরাম হোসেন বলেন, ‘শনিবার টিকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় তার বোনকে। রবিবার দুপুরে দেবরসহ ৫ জনকে আসামী করে মামলা করেছি। আজ সোমবার ভোরে ৪টায় আমার বোন মারা গেছেন। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছিলো।’

এদিকে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যরা পারভীনের অগ্নিদগ্ধের বিষয়ে তাদের কেই জড়িত নয় বলে দাবী করেন।

তারা জানায়, পারভীনের সাথে তাদের কোন রকম যোগাযোগ বা সর্ম্পক নেই।প্রায় ১৪ বছর আগে পারভীন ও জাকির হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের একটি এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে সন্তানটি মারা যাওয়ার পর তাদের ঘরে আরেকটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। পরে জীবিকার তাগিদে জাকির বিদেশে চলে যায়। তারপর থেকে পরিবারে নেমে আসে অশান্তি। পারভীনের বেপোরোয়া চলাচলের কারনে সমাজ জাকির হোসেনের পরিবারকে অনেকটা একঘরে করে দেয়। গত ৫ জানুয়ারী ২০২০ পারভীন আক্তারের ১ম স্বামী জাকির হোসেনকে তালাক দেয় সে। পরে ১ মার্চ ২০২০ নরসিংদী শহরতলীর দাস পাড়া মহল্লার ভিকচাঁন মিয়ার ছেলে শাহ আলমকে বিয়ে করে। এরপর থেকে জাকিরের পরিবারের সাথে পারভীনের কোন ধরনের সম্র্পক নেই বলে জানান তারা।

তারা আরও জানায়, দ্বিতীয় স্বামীকে বিয়ে করার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটান পারভীন। শাহআলম কিছু পর জেল থেকে বেড়িয়ে এসে তার নামে করা মামলাটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করান। পরে আদালত মিথ্যা মামলার জন্য পারভীনকে জেল হাজতে পাঠায়। কিছুদিন জেল সে জামিনে মুক্ত হয়।

পরে দ্বিতীয় স্বামীর সাথেও ছাড়াছাড়ি হয় পারভীনের। এরপর থেকে বিভিন্ন কায়দায় পুনরায় ১ম স্বামী জাকিরের কাছে আসতে চায় পারভীন। কিন্তু জাকির তাকে পুনরায় গ্রহন না করায় সে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দমকি দিয়ে আসছিলো। শুধু তাই নয় তাকে গ্রহন না করলে বিভিন্ন মামলায় জাকিরের পুরো পরিবারকে ফাঁসানোর হুমকিও দেয় পারভীন। শনিবার তাদের বাড়ীতে পুলিশ আসলে পারভীনের অগ্নিদগ্ধের বিষয়টি জানতে পারে বলে তারা জানায়।

রায়পুরা থানার সেকেন্ড অফিসার দেব দুলার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীর ভাই ৫ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। সত্য ঘটনা উৎঘাটনে তদন্ত চলছে।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ