ইতি বর্মণ
নরসিংদীর শিবপুরের যোশর ইউনিয়নে গত ৫ জানুয়ারি ৫ম ধাপে অনুষ্ঠিত দুটি কেন্দ্রের পুনরায় ভোট গণনা ও ১টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ করে ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত গেজেট প্রকাশ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন আনারস প্রতীকের এই প্রার্থী।
এর আগে তিনি নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় ও পরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে গেজেট প্রকাশ স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, যশোর ইউনিয়নের ভঙ্গারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নৌকাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ছাড়া বাকি ৭টি কেন্দ্রে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হয়। এই তিনটি কেন্দ্রে দুপুর ১২টার পর প্রিসাইডিং অফিসাররা নিজ কক্ষে বসে নৌকা প্রতীকে সীল মেরেছেন। নৌকাঘাটা কেন্দ্রে পৌনে ৩টার সময় ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।
স্থগিতের কারণ জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার মো: নূরুল আমিন উপরের নির্দেশে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান পরে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে না জানিয়ে বিকাল ৪টায় আবার কেন্দ্রটি চালু করেন। এক পর্যায়ে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা না করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ব্যালট বাক্স নিয়ে ওই প্রিসাইডিং অফিসার চলে যায়।
অপরদিকে দুপুর ১২টায় কামালপুর কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর রাসেল আহমেদ এর নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়। পরে কেন্দ্রে ফলাফল পাল্টিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ফল ঘোষণা ছাড়া কেন্দ্র ত্যাগ করেন ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার।
এছাড়া ভঙ্গারটেক কেন্দ্রে উপস্থিত সকলের সামনে ঘোষণা করা ফলাফলে আনারস ১৪৮২ ভোট ও নৌকা ৪২৭ ভোট পায় বলে জানানো হয়। কিন্তু এসময় লিখিত ফলাফল না দিয়ে পুলিশ দিয়ে কর্মীদের মারধর করে ব্যালট বাক্স নিয়ে চলে যায়।
আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফজ্জল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ভোট হওয়া ৭টি কেন্দ্রসহ অপর তিন কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের হিসেব মতে মোট ৯ হাজার ১৩৮ ভোট পেয়েছি, প্রতিন্দন্দ্বি নৌকা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭ শত ৮৯ ভোট। রাতে ফলাফল কারসাজি করে আমাকে পরাজিত দেখিয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। সরকারি ঘোষণা করা ফলাফল সীটেও ঘষামাজা ও কাটাছেড়া করা ।শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে এসব অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছেন, এমন কী স্থগিত কেন্দ্রের ফলও ঘোষণা করা হয়েছে।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তার আওতায় থাকেন। তাই নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপর আমার প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নই উঠে না। এছাড়া কোন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ না অবৈধ পুরোটাই নির্ধারণের দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার। পরাজিত হওয়ার পর যে কেউ সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ করতে পারেন, তবে আমরা আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই করিনি।
নরসিংদী জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মেছবাহ উদ্দিন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ পেযেছি, এটা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি। তবে নির্বাচন হওয়ার পর যখন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে দেয় এবং ব্যালট পেপারগুলো সিলগালা করা হয় তখন আমাদের কিছু করার নাই। পুরোটাই হাইকোর্টের বিষয়।