মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু
আজ পহেলা নভেম্বর নরসিংদীর জনপ্রিয় প্রয়াত মেয়র জনবন্ধু খ্যাত লোকমান হোসেনের ১১ তম মৃত্যূবার্ষিকী। মেয়র লোকমান ছিলেন এ যাবৎকালের নরসিংদী পৌরসভার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল মেয়র। পাশাপাশি তৎকালীন নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র লোকমান ছিলেন একজন জননন্দিত সফল রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নেতা।
জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদী পৌর আস্থা বিশ্বাসী একজন জনপ্রিয় নেতা। জনগণের প্রিয় এই রাজনীতিবিদ ছিলেন জনমানুষের নেতা। তাই তাকে সাধারণ মানুষ ভালোবেসে জনবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। প্রয়াত লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলী বর্তমানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। বর্তমানে তিনিও স্বামী লোকমান হোসেনের মতো চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষের কাছে যেতে এবং সেবা করতে।
মেয়র লোকমান হত্যার পর তার ছোট ভাই মো. কামরুজ্জামান কামরুল পর্যায়ক্রমে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। কামরুজ্জামান কামরুল মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রয়াত লোকমান হোসেন এর মতই পৌর বাসীর সুখ-দুঃখে সব সময়ই পাশে থেকে নরসিংদীর সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন সমর্থ্য হয়। বিগত করোনা কালীন সময়ে নরসিংদীর অনাহারি মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়েছেন নিজ হাতে। আর এরই জন্যে মানবতার এই ফেরিওয়াকে মানবিক মেয়র উপাধিতে আখ্যায়িত করেন নরসিংদী পৌরবাসী ।
লোকমান পরিবারের প্রতি পৌরবাসীর এত সহস্র ভালোবাসা থাকার পরও কোথাও যেন একটা শূণ্যতা অনুভূব করে লোকমান পরিবার ও গোটা নরসিংদীবাসী ।
ইতোমধ্যে মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার ১১ বছর পার হলো। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন মেয়র লোকমান। নরসিংদীর এই স্বপ্নদ্রষ্টার মৃত্যুর খবরে থমকে যায় গোটা নরসিংদী। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচারকাজ বলা যায় একরকম থমকে আছে। আসামিদের সবাই জামিনে রয়েছে। আধুনিক নরসিংদীর রূপকার এবং নরসিংদীবাসীর আস্থার কেন্দ্রস্থল মেয়র লোকমান হোসেনের জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডের পর তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু’র ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েক করেন। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় দীর্ঘ ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এইহত্যা কান্ডের বিচার কাজ এখনো থমকে আছে।
লোকমান হত্যার ১১ বছর পর আজ গোটা নরসিংদীবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন বার বার উকি দিচ্ছে এ হত্যাকান্ডের বিচার আদৌ হবে কি………….. ?
মেয়র লোকমান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল প্রায় আট মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী। আদালত ওই বছরের ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। এরপর একই বছর ২৮ আগস্ট নারাজি খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। পরে ২ সেপ্টেম্বর আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে আবার নারাজি আবেদন খারিজ করেন।
এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে আদালতে বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন করেন বাদী। আদালত আবেদন আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরই মধ্যে জামিনে ছাড়া পাওয়া আসামিরা সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।
এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় থাকার পর আদালত ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি আসামিদের করা রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে বাদীর নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে এবং বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১৯ সালের ২৫ জুন দুপুরে নরসিংদী জজ আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুল ইসলাম শুধু বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহণ করে তদন্ত শেষ করে দেন। পরে বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। পরবর্তীতে করোনা মহামারির কারণে আদালতের কার্যক্রমে আসে স্থবিরতা । বর্তমানে তা শুনানির অপেক্ষায় আছে। এরই মধ্যে মেয়র লোকমান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আবদুল মতিন সরকার মারা গেছেন।
এ মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদ আলী বলেন, ‘উচ্চ আদালতের এক আদেশে আসামিদের করা রিট পিটিশন নিষ্পত্তি করে বাদীর দায়ের করা নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিম্ন আদালত শুধু বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে মামলার পুনঃতদন্ত শেষ করে দেন। তাই আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেছি।
মামলার বাদী ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। যত দিন পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামিদের বিচারের আওতায় না আনা হবে, তত দিন আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’ সত্যের জয় একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ।