নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর মাধবদীতে আধিপত্য বিস্তার এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে মাধবদী পৌর মেয়রে নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মো. জাকারিয়া (৪২) গুরুতর আহত হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে শহরের রাধুনী রেষ্টুরেন্টের সামনে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
জাকারিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম এবং পরে গুলি করে মারাত্মক ভাবে আহত করে সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় নূরালাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য সচিব আবুল কালাম (৩৮)ও গুলিবিদ্ধ হয়। এঘটনায় আরও ৮ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গুলিবিদ্ধ দু’জনকে ঢাকা মেডিকেল ভর্তি করা হয়েছে।বাকীদেরকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, আগামী ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে বুধবার বিকালে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। শহরের রমনী কমিউনিটি সেন্টারের ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা চলাকালে মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক ও তার অনুসারীরা সেখানে যায়। এসময় ব্যানারে পৌর মেয়রের নাম না থাকায় মভা করতে নিষেধ ও গালিগালাজ করে চলে যায় সে। সভা শেষে মাধবদী পৌরসভার সাবেক কমিশনার যুবলীগ নেতা জাকারিয়াসহ ১০/১৫ জন নেতাকর্মী পৌরসভার মোড় হয়ে ফিরছিলেন। এসময় পৌর মেয়র মানিকের নেতৃত্বে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে গুলি ছুড়লে এতে জাকারিয়াসহ দু্’জন গুলিবিদ্ধ হয় এবং এঘটনায় আরও ৮ জন নেতাকর্মী আহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল পাঠানো হয়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসিম আল ইসলাম বলেন, আহত দুইজনের একজনের ডান পায়ে ও অপরজনের বাম পায়ে ফোটা দেখা গেছে। গুলিবিদ্ধ কী না পরীক্ষার পর বলা যাবে। পরে তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গুলিবিদ্ধ জাকারিয়ার বড়ভাই নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন (সাবেক কমিশনার) বলেন পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্য পৌর মেয়র মোশররফ ও তার সন্রাসী বাহিনী আমার ভাইকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই গুলি করে।
মাধবদী পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মিছিল নিয়ে এসে আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে আহতদের নাম বা তারা কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা জানাতে পারেননি তিনি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ও সংঘাত এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তদন্তের পর আহতের সঠিক সংখ্যা বলা যাবে।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলার খবর শুনে জাকারিয়াসহ অন্যদের দেখতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান, নরসিংদী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শামীম নেওয়াজসহ জেলার নেতা কর্মীরা ছুটে আসেন নরসিংদী সদর হাসপাতালে। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবী জানান ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান, নরসিংদীর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) তামান্না নুসরাত বুবলীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।