আজ ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামায় সনদ জাল

রায়পুরা প্রতিনিধি

নরসিংদীর রায়পুরায় নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও জাল সনদ সংযুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে জোৎস্না বেগম নামে এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৭ মে) রিটার্নিং অফিসার মো. মোশারফ হোসেন এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অভিযোগে জানা যায়, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জোৎস্না বেগম তার নির্বাচনী হলফ নামার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) যে সনদপত্রটি সংযুক্ত করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও জাল। হলফনামার সাথে দেয়া সনদে জানা যায় জোৎস্না বেগম নরসিংদীর রায়পুরা কলেজর মানবিক শাখা থেকে ১৯৯৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই বছর রায়পুরা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া এ নামে পরীক্ষার্থীর নাম উক্ত কলেজের রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত নেই।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৭ মে) সরেজমিন নরসিংদীর রায়পুরা সরকারী কলেজে এই প্রতিবেদক হাজির হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯৬ সালে রায়পুরা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগের ৩৩৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা থাকলে ৪ জন পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় সর্ব মোট ৩৩৪ জন পরীক্ষার্থী ওই বছর মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জোৎস্না বেগম তার নির্বাচনী হলফনামার সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষার যে সনদপত্র সংযুক্ত করেছে তার সাথে কলেজ রেজিস্ট্রারে ওই সালের পরীক্ষার্থীদের যেসকল তথ্য লিপিবদ্ধ আছে তার সাথে কোন মিল নেই। শুধু তাই নয় সনদপত্রটিতে পরীক্ষার রোল নং দেয়া আছে ১২২১২০ (এই নম্বরটি) অথচ রায়পুরা কলেজের রেজিষ্ট্রার হাতিয়ে দেখা যায় যত জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন তাদের কারোই রোল নং এর সাথে মিল নেই এবং ‘১২’ সিরিয়ালের কোন রোল নং নেই। রোলই নয় রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত পরীক্ষার্থীদের সনদ ক্রমিক নং এবং রেজিঃ নং এর কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত পরীক্ষার্থীদের সনদে থাকা সবগুলো নাম্বারের সাথে হলফনামায় দাখিলকৃত সনদের নাম্বার গুলোর কোন মিল না থাকায় সনদপত্রটি মিথ্যা, বানোয়াট ও জাল বলে বিবেচিত হয়।

এবিষয়ে রায়পুরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবদুল মতিনের একটি বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী নির্বাচনী হলফনামায় সংযুক্ত সনদটি সৃজন করা একটি ভূয়া জাল ও বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই নয়।

নির্বাচনী গেজেট অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ১৭ এর উপ-বিধি (৩) এর দফা (ঙ) অনুসারে কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্রের সাথে বিধি ১৫ এর উপ-বিধি (৩) এর দফা (গ) এর উপ-দফা (গ) এর অধীন হলফনামা দাখিল না করলে বা দাখিলকৃত হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করা হলে বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা হলে বা হলফনামায় উল্লিখিত কোন তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল, ইত্যাদি দাখিল না করলে রিটার্নিং অফিসার স্বীয় উদ্যোগে, অথবা বিধিমালার এ উল্লিখিত কোন ব্যক্তি কর্তৃক উত্থাপিত আপত্তির প্রেক্ষিতে, তদন্ত পরিচালনা করে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন। এতদ্ব্যতীত হলফনামায় প্রদত্ত কোন তথ্য মিথ্যা বা ভুল বলে প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

এব্যাপারে চেয়ারম্যান ম্যান পদপ্রার্থী জোসনা বেগমের সাথে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে ফোন করলে প্রথমবার তিনি ফোন রিসিভ করে করলে জাল সনদের বিষয়টি জানতে চাইলে তুমি কিছুই জানেন না বলে জানান এবং ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবে বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর ২/৩টি মোবাইল থেকে তার মোবাইলে দফায় দফায় বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি কোনটিতেই সাড়া না দেয়ায় আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

রায়পুরা উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মো. মোশারফ হোসেন জাল সনদের বিষয়ে বলেন, জোৎস্না বেগমের মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে। তবে অপর প্রার্থী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। প্রার্থী বৈধ করার পর অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। এব্যাপারে জেলাপ্রশাসক বরাবর আপীল করা যেতে পারে। আপীলের প্রেক্ষিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জেলা প্রশাসক যে সিদ্ধান্ত নিবে, সে সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ