মাজহারুল ইসলাম রাসেল
ভোর হলেই আজ রবিবার (২৮ নভেম্বর) তৃতীয় ধাপে সারাদেশে ১ হাজার ৭টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে নরসিংদী জেলার দুই উপজেলায় মোট ২২ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ১০টি এবং রায়পুরা উপজেলায় ১২টি।
শনিবার দুপুর থেকে বিতরণ করা হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। উপজেলা পরিষদ থেকে এসব সরঞ্জাম নিয়ে যায় নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তবে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হলেও রবিবার সকালে অর্থাৎ ভোট গ্রহণ শুরু করার আগে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন।
ইউনিয়নগুলো মধ্যে নরসিংদীর সদরের :- চিনিশপুর, হাজীপুর, করিমপুর, নজরপুর, পাঁচদোনা, মেহেরপাড়া, শীরমান্দী, আমদিয়া, পাইকারচর ও কাঠালিয়া ইউনিয়ন।
রায়পুরার :- অলিপুরা, আদিয়াবাদ, চান্দেরকান্দি, ডৌকারচর, মরজাল, মহেশপুর, মুছাপুর , মির্জাপুর, রাধানগর, পলাশতলী, রায়পুরা ও উত্তরবাখরনগর ইউনিয়ন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর ২২ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৮২ জন।
নরসিংদী সদর ১০ টি ইউপিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ৩২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এই নির্বাচনে ইউনিয়নগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীর তুলনায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাই বেশী।এছাড়া সদস্য পদে মোট ৭০৭ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ২১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
অপরদিকে চলমান ইউপি নির্বাচনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে অংশ না নিলেও কয়েকটি ইউনিয়নে অঘোষিতভাবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকা ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন জানান, বর্তমান সরকারের অধিনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাই কোনো ইউনিয়নেই বিএনপির প্রার্থী নেই।
নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, মো. নুরুজ্জামান (নৌকা) স্বতন্ত্র হিসেবে আ’লীগ বিদ্রোহী শিবলু ভূইয়া (আনারস), অঘোষিত বিএনপি’র প্রার্থী মেহেদী হাসান তুহিন (মোটর সাইকেল) হাজীরপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মো. ইউসুফ খান পিন্টু (নৌকা), আ’লীগ বিদ্রোহী কবির হোসেন ( চশমা) এই ইউপি বিএনপির অঘোষিত দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন- শামীম সরকার (আনারস) সাদেকুর রহমান সাদেক মোটর সাইকেল), করিমপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী মমিনুর রহমান (নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী গোলাম কিবরিয়া (আনারস), নজরপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদেন জন্য ৪ জন প্রার্থী ভোটে মাঠে লড়ে যাচ্ছেন মো. সাইফুল হক (নৌকা), আ’লীগ বিদ্রোহী মোঃ জালাল উদ্দিন সরকার (আনারস), মো: আলমাছ (গোলাপ ফুল), ইশা’র মো: জামাল মিয়া (হাত পাখা)। মেহেরপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২ জন আজহার অমিত (নৌকা) হাতপাতা প্রতীকে ইশা’র অপর একজন প্রার্থী থাকলেও এলাকায় তার কোন প্রচার-প্রচারণা পরিলক্ষিত হয়নি, শীলমান্দী ইউনিয়নে ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ নৌকা), আ’লীগ বিদ্রোহী মোঃ আব্দুল বাকির(আনারস) অপরজন হাতপাকা প্রতীকের নিয়ে প্রার্থীতা করছেন, আমদিয়া ইউনিয়নে ২ জন প্রার্থীর মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে রহিজ মিঠু (নৌকা), আ’লীগ বিদ্রোহী নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়াা রিপন (আনারস) ও কাঠাঁলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ৩ জন প্রারর্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো.এবাদুল্লাহ (নৌকা) বিদ্রোহী হিরণ মোল্লা (আনারস) অঘোষিত বিএনপির মোঃ আক্তার হোসেন (চশমা)।
পাঁচদোনায় মিজানুর রহমান নৌকা) ও পাইকারচরে আবুল হাসেম (নৌকা) এই দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে তারা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওই দুই ইউনিয়নে শুধু মাত্র সদস্য পদে নির্বাচন হবে।
রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ৫১ জন প্রার্থীরা হলেন- অলিপুরা ইউনিয়নের ৪ জনের মধ্যে আল আমিন ভুইয়া মাসুদ (নৌকা), আ’লীগ বিদ্রোহী আলী আহমেদ দুলু (চশমা) মো: ওবায়দুল হক (আনারস) ও সোরহাব হোসেন (হাতপাখা),আদিয়াবাদ ইউনিয়েনে ৬ প্রার্থী ভোটের মাঠে লড়ছেন মো. সেলিম (নৌকা) এছাড়া বাকী ৫ জন আ’লীগসহ অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছেন আবুল কাশেম মোটর সাইকেল) ইফতেখার হোসেন (টেলিফোন) জামান মিয়া (আনারস) মাইন উদ্দিন ঘোড়া) আশাদুজ্জামান ভূঁইয়া (চশমা), চান্দেরকান্দি ইউনিয়নে ২ জন প্রার্থী মো. খোরশেদ আলম নৌকা এবং বিদ্রোহী হিসেবে লড়ছেন মেজবাহ উদ্দিন খন্দকার (আনরস), ডৌকারচর ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা (নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী ২ জন আমিনুল হক লিটন (আনারস) বেলায়েত হোসেন টেবিল ফ্যান) অঘোষিত বিএনপির মাসুম মিয়া (টেলিফোন) এবং ইশার আবুল কালাম আজাদ (হাতপাখা), মরজাল ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থী সানজিদা সুলতানা (নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী ২ জন মুরাদ হোসেন মোটর সাইকেল) ও আতাউর রহমান (আনারস) এছাড়া ইশার ইমরুল কায়েস (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্তী গোলাপ মিয়া (চশমা), মহেশপুর ইউনিয়নে আঃ রউফ নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী ৩ জন ফরহাদ হোসেন (চশমা) গিয়াস উদ্দিন (আনারস) শামীম চৌধুরী (অটোরিক্সা) বিএনপির অঘোষিত রফিক হোসাইন (ঘোড়া) ও ইশার মিজানুর রহমান ( হাতপাখা), মুছাপুর ইউনিয়নে ৩ জন প্রার্থী হলেন মোহাম্মদ হোসেন ভূইয়া নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী সানা উল্লাহ ভূঁইয়া জাকির (আনারস) অপরজন জাকের পাটির গোলাম রাব্বানী (গোলাপ ফুল), মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ জন প্রার্থী মো: সাদেক মিয়া নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী ২ জন মস্জুর এলাহী (চশমা) আসাদুল্লাহ (আনারস), অন্যরা আলতাব হোসেন (মোটরসাইকেল) ও সাফায়েত হোসেন (রজনীগন্ধ্যা), রাধানগর ইউনিয়নে ৪ জন প্রার্থী মো. মোহর মিয়া নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী হয়েছেন ২ জন খোরশেদ আলম (চশমা) ও তাজুল ইসলাম (আনারস) ইশার আবুল বাশার ভূঁইয়া, পলাশতলী ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া নৌকা) আ’লীগ বিদ্রোহী ৩ জন মোস্তফা কামাল (অটোরিক্সা) কাজী নূর আহমেদ (আনারস) ও ইসহাক মিয়া (মোটর সাইকেল) এছাড়াও ইশার মো: মোশারফ হোসেন( হাতপাখা), রায়পুরা ইউনিয়নে ৩ জন মো.আনোয়ার হোসেন হালিম (নৌকা) বিদ্রোহী ফারুক হোসেন(আনারস) ও মাসুদ রানা (রজনীগন্ধ্যা) উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নে ৪ জন প্রার্থী মো. হাবিব উল্লাহ নৌকা) বিদ্রোহী ২ জন ওমর ফারুখ (আনারস) ফজলুল হক (চশমা) ও ইশার হায়দার আলী (হাতপাখা)।
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি এ বিষয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটাররা। তবে প্রশাসন বলছে, নির্বাচনকে ঘিরে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে প্রচার প্রচারণা শেষ করেছে প্রার্থীরা। নির্বাচনী এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে চায়ে কাপে ধোয়া তোলাসহ সর্বত্রই চলছে প্রার্থীদের নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানা রকম আলোচনা।
নরসিংদী জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন বলেন, জেলার সদর ও রায়পুরা উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে ভোটের দিন সকালে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছানো হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী পরিবেশ আমাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে দু’একটি ছোট-খাটো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তেমন বড় কোনো ধরনে ঘটনা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। কোনো প্রকার অভিযোগ পাওয়া মাত্র পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনার পাশাপাশি প্রত্যেক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।