হাফিজুর রহমান
নরসিংদীতে প্রতিবেশীদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বৃদ্ধ শাশুড়ি ও কোলের শিশু সন্তানসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে দীর্ঘ ১০ দিন যাবত ঘরের চালা এবং বেড়াহীন অবস্থায় মাঘ মাসের তীব্র শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে তাছলিমার পরিবার।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটায় সরেজমিনে, নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন কাঠালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খাসকল্লাতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অসহায় তাছলিমা তার শিশু সন্তান, বৃদ্ধ শাশুড়ি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে মাঘের তীব্র শীতে জড়োসড়ো হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে তাছলিমা বলেন, আমাদের পূর্বের ঘরের চালা ও বেড়ার টিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘরটি পুনঃ নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করি। কিন্তু প্রতিবেশী ফালু, আসাদ, দুলাল, মনু ও জুয়েল তাতে বাদ সাধে।
তারা আমাদের এখানে জমি পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ঘরের মেরামত কাজ বন্ধ করে দেয়। আজ দশদিন ধরে আমরা খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। তীব্র শীত, কুয়াশা ও বাতাসের মধ্যে খোলামেলা স্থানে রাত যাপনের ফলে আমার শিশু সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার ওপর এ অন্যায় ও জুলুমের বিচার চেয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করছি।
তাছলিমার স্বামী আনজত আলী বলেন, ফালু ও দুলালের পিতার জীবদ্দশায় আফজল মিয়ার নিকট সাড়ে নয় শতাংশ জমি বিক্রি করে। গত তিন বছর পূর্বে আফজল মিয়ার ওয়ারিশদের কাছ থেকে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। সামনে ঝড় বৃষ্টির দিন বিধায় গত দশ দিন আগে পুরনো ঘরটি মেরামতের জন্য ভেঙে নতুন করে কাজ শুরু করি।
পরে প্রতিবেশী ফালু, আসাদ, দুলাল, মনু ও জুয়েল আমার এখানে জমি পাবে বলে ঘর তুলতে বাঁধা দিলে আমি এলাকাবাসীর শরণাপন্ন হই। তারা এসে আমাদের উভয়ের কাগজপত্র দেখে আমার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তারা সে রায় অমান্য করে জোরপূর্বক আমার গৃহনির্মাণের কাজ আটকে রেখেছে।
বর্তমানে আমি আমার বৃদ্ধ মা, শিশু সন্তান ও পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমি এলাকার সবার কাছে গিয়েছি কিন্তু তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও খারাপ আচরণের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি আমার পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এলাকার প্রবীণ বিচারক আতশ আলী বলেন, আনজত আলী এই জমিটি কিনে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। তার কাগজপত্র সব ঠিক আছে। শুধুমাত্র প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তার ঘরের মেরামতের কাজ আটকে রাখা হয়েছে।
৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজিদ মেম্বার বলেন, আমি এবং কবির মুহুরি, মজিদ প্রধান, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা ও রেজেক প্রধানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসে উভয়ের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আনজত আলীর পক্ষে রায় দিয়েছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ সে রায় মানেনি। তাদের দাবিকৃত জমি অন্যের দখলে রয়েছে। তাছাড়া যার দখলে আছে সে ওই জমি ছেড়ে দিতেও রাজি হয়েছে তদুপরি তারা জোড় করেই আনজত আলীর কাজ বন্ধ করে রেখেছে।
এব্যাপারে প্রতিবেশী ফালু,আসাদ, দুলাল, মনু ও জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করতে তাদের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের আগমনের খবরে তারা বাড়ি থেকে সটকে পড়েছে।
তাদের মোবাইল একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।