কাজী রুনা লায়লা
নরসিংদীতে ব্যাবসায়ী নয়ন মিয়ার হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রবিবার(২৩ মে) বেলা ১১ টায় নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা বাজার এলাকায় কয়েক শতাধিক নারী ও পুরুষ মিলে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে নিহতের বড় ভাই রতন মিয়া, ছোট ভাই হেলাল মিয়া, নিহতের স্ত্রী শাহানাজ বেগম ও দুই ছেলে সাদিকুর রহমান ও আজিজুর রহমান সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বক্তব্য রাখেন।
এসময় বক্তারা নয়ন হত্যার ৫ দিন গত হলেও নিহত নয়নের খুনীদেরকে এখনো গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এসময় বক্তারা বলেন,মেহেরপাড়া এলাকার মুর্তিমান আতঙ্ক,সন্ত্রাসীদের গডফাদার, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজ ও পুলিশের তালিকাভুক্ত একাধিক মামলার আসামি ১ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আতাউর রহমান ভূঁইয়া ও ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য দানা মিয়ার প্রত্যক্ষ মদদে শান্ত বাহিনীর মতো একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি,মাদক বেচাকেনা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী মূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ী মহল অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।এব্যাপারে মাধবদী থানায় একাধিক অভিযোগ করেও এলাকাবাসী এর কোন প্রতিকার পায়নি উল্টো তাদের চক্ষুশূল হয়ে কয়েক দফা হামলার শিকার হয়েছে।
তারা আরো বলেন,মেহেরপাড়ার চৌয়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, একাধিক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও মাদক কারবারি শান্ত, আশু, বদু, রবিউল,রহিজ ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে চৌয়া উত্তর পাড়া এলাকার মানিক মিয়ার মেঝো ছেলে ইট-বালু ব্যাবসায়ী নয়নের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। নয়ন তাদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করে।
বিগত দেড় মাস পূর্বে শান্ত, তাদের লিডার আতাউর রহমান ভূঁইয়া ও দানা মিয়ার নির্দেশে নয়নকে তার মোটরসাইকেলসহ অপহরণ করে এক নির্জন স্থানে আটকে রেখে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। পরে আতাউরের মধ্যস্থতায় ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে মুচলেকা রেখে নয়নকে ছেড়ে দেয়। পরে নয়ন ছাড়া পেয়ে এসে এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য তুহিন ও এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিষয়টি জানায়। পরে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে নয়নের কাছ থেকে তারা আর টাকা চাইবে না বলে তুহিন মেম্বার আশ্বস্ত করে।
কিন্তু বিগত ৪/৫ দিন ধরে রবিউল পুনরায় চাঁদার টাকা চেয়ে নয়নকে বিরক্ত শুরু করে। চাঁদার টাকা না দিলে তাক প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবার(১৮মে) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নয়ন ইট-বালু বিক্রির টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আক্তারের দোকানের সামনে পৌঁছলে ঘাতক শান্ত তার দলবল নিয়ে নয়নের উপর হামলা করে।
এসময় শান্ত তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে নয়নের বুকে ছুরিকাঘাত করলে নয়ন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এসময় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মাহফুজ নামের এক জনকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।পরে এলাকাবাসী নয়নকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এ ব্যাপারে নিহত নয়ন মিয়ার ছোট ভাই হেলাল মিয়া ১৩ জন আসামির নাম উল্লেখ পূর্বক মাধবদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তারা হলো শান্ত (২২) দানিসুর রহমান দানা (৫৫) আতাউর রহমান ভূঁইয়া (৩৫) মোঃ শরিফ মিয়া (৩২) মোহাম্মদ বাশেদ মিয়া (৩২) খোরশেদ আলম খস ৩৮ বদিউজ্জামান বধু (২২) আসাদুজ্জামান (২০) আনোয়ার হোসেন (৪৫) মুসা মিয়া (৪০) রবিউল (৩৪) মাহফুজ হাজার (১৯) ও সোহান (২৫)।
নয়ন হত্যাকান্ডের ৫ দিন গত হলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেফতার করেনি বিধায় নয়ন হত্যার বিচার নিয়ে নয়নের পরিবার ও জনমনে সংশয় বিরাজ করছে।
এমতাবস্থায় নয়ন হত্যার প্রধান আসামি শান্ত ও তার মদদ দাতাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।