খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর শিবপুরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে হাতে হাত কড়া এবং কোমড়ে দঁড়ি বেধে আদালতে প্রেরণ করায় জেলা জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদার শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। শনিবার (১১ জানুয়ারী) বিকেলে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।
এর আগে গত শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯ টার দিকে শিবপুরস্থ তার নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শনিবার বিকেলে তাকে আদালতে প্রেরণ করে থানা পুলিশ। শিবপুর থানা পুলিশ একজন দাগী আসামীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে হাতে হাত কড়া এবং কোমড়ে দঁড়ি বাধা অবস্থায় আদালতে চত্বরে নিয়ে আসে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এ অবস্থায় আদালনে নিয়ে আসার ঘটনার স্থির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অল্পসময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন মিডিয়ায়ও বিষয়টি প্রকাশ পেলে জেলা জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।
উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, শনিবার সারাদেশে বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচীকে ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। শিবপুরে এই কর্মসূচী বানচাল এবং নেতাকর্মীদের মাঝে আতংক ছড়াতে শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ছালেক রিকাবদার ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া দেশের একজন বীর সন্তানকে গ্রেফতার পরবর্তী হাতে হাত কড়া এবং কোমড়ে দঁড়ি বাধা অবস্থায় আদালতে প্রেরণ করার বিষয়টি জেলা জুড়ে নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আবু ছালেক রিকাবদার রাজনীতিবীদের পাশাপাশি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আর একজন বীরমুক্তিযোদ্ধাকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে আবার কোমড়ে দঁড়ি বেধে আদালতে প্রেরণ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন উপজেলাসহ জেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সুশিল সমাজ ও সাধারণ জনগন। স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধারা জানান, রাজনৈতিক মামলায় যে কেউ গ্রেফতার হতেই পারেন, কিন্তু আবু ছালেক রিকাবদার কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চোর-ডাকাত, কিংবা খুনিও নন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ফলে তাকে কেন হাতে হাতকড়া পড়ানোর পরও কোমরে রশি বাধা হলো সেই প্রশ্ন এখন শিবপুরের সর্ব মহলে।
এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মোতালিব খান বলেন, ‘আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ভাবে কোমড়ে দঁড়ি বেধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে যা খুবই দু:খ জনক’।
মুক্তিযুদ্ধাকালীন শিবপুর থানার কমান্ডার প্রফেসর আব্দুল মান্নান খান বলেন, আবু ছালেক রিকাবদার একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করে হাতে হাতকড়াসহ কোমরে দঁড়ি বেধে ন্যাক্কার জনক কাজ করেছে। এতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। আমি এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার দু:খ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মুহসীন নাজির বলেন, এটা খুবই দু:খ জনক। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ছালেক রিকাবদার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ওনাকে গ্রেফতারের বিষয়টি উপজেলা আওয়ামীলীগ অবগত নয়। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে হাতকড়া পড়ানোর পরও কোমড়ে দঁড়ি বাঁধা হয়েছে যা সত্যিই লজ্জার।
নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুর এলাহী। বলেন, আবু ছালেক রিকাবদার শুধু শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নয়, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিনা কারণে পুলিশ গ্রেফতার করে যে অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয় তাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারের শুধু মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়নি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানী করেছে বলে নরসিংদীবাসী মনে করেন।
একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার কোমড়ে রশি বাধা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, রাজনৈতিক মামলায় আবু ছালেক রিকাবদারকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে কোমড়ে দঁড়ি বাধার বিষয়টি আমার জানা নেই, তার সাথে যারা ছিল তারা বলতে পারবে।