আজ ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নরসিংদী নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা

খাসখবর প্রতিবেদক

কাল রবিবার (১২ নভেম্বর) নরসিংদীতে আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যাদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পুরো নরসিংদী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ৭ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে নরসিংদীর পলাশে উদ্বোধন করবেন দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্পের। এরপর পলাশে সুধী সমাবেশসহ জেলা শহরের মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে এক জনসমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে নরসিংদীবাসী। এর আগে তিনি সর্বশেষ নরসিংদী এসেছিলেন ২০০৪ সালের ২২ শে এপ্রিল। সেসময় তিনি বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে এক জনসভায় যোগ দিয়েছিল। কিন্তু এবার তিনি নরসিংদীতে আসছে সরকার প্রধান হিসেবে। তাই নরসিংদীবাসী তাদের চাওয়া-পাওয়ার ও স্বপ্নপূরণের আশা করছেন।
রাজধানী ঢাকার অতি নিকটে কৃষি ও শিল্প সমৃদ্ধ জেলা নরসিংদীর মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের জোর দাবি রাখবেন বলে জানা যায়। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিবেন এমন আশায় বুক বাঁধছেন জেলার ২৪ লাখ মানুষ।
প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত নরসিংদী বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রধান শিল্পাঞ্চলীয় জেলা। জেলায় ৩৬টি কলেজ, ১৬টি কারিগরি বিদ্যালয়, টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটট, ৬টি পলিটেকনিকসহ ১১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই কোন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। একই সাথে নেই আধুনিক স্টেডিয়াম ও সবজির হিমাগার।
দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী করে আসলে সকল সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্বেও কাজের কাজ হয়নি। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন নরসিংদীবাসী।
নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তফা মিয়া বলেন, নরসিংদীর কৃষি ও শিল্পের ব্যাপক অবদান রয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। তাই নরসিংদীতে যদি শিল্প নির্ভর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় তাহলে শুধু নরসিংদীবাসী নয়, দেশবাসী উপকৃত হবে।
নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামটি বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি জানান, ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা হিসেবে নরসিংদীতে একটি আধুনিক স্টেডিয়াম স্থাপন এখন সময়ের দাবি। যেখানে স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক ক্রীড়া আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। এই উদ্যোগ ক্রীড়া ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে নরসিংদীর তরুণ প্রজন্ম।
একই সাথে সবজির জন্য বিখ্যাত এই জেলার সবজি রাজধানী ঢাকার ৪০ ভাগ চাহিদা পূরণ করছে। একই সাথে লটকন, পেয়ারা, কাঁঠালসহ দেশী বিদেশী নানা প্রকারের ফল উৎপাদিত হয় নরসিংদীতে। কিন্তু জেলায় নেই কোন সরকারি হিমাগার। ফলে পচনশীল এইসব সবজি ও ফল সময়মতো ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষকরা। তাই কৃষকদের দাবি জেলায় সরকারি হিমাগার স্থাপনের।
এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রী ও নরসিংদী-০৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে উন্নয়নের যে বিপ্লব ঘটিয়েছে নরসিংদী তার বাইরে নয়। তিনি নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সার কারখানা নির্মাণ করেছেন। নরসিংদী বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বেলাবতে আরেকটি শিল্প নগরী স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, একই সাথে নরসিংদীবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের বিষয়ে অবগত আছেন তিনি। আশা করি, সমাবেশের মঞ্চ থেকে নরসিংদীবাসীর দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে দিবেন।
এদিকে দীর্ঘ ১৯ বছর পর দলীয় সভানেত্রীর নরসিংদী আগমন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও জেলা আওয়ামী লীগ।
সকালে প্রধানমন্ত্রী নরসিংদীর পলাশে উপস্থিত হয়ে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। পরে সেখানে সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে বিকালে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়। এ উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। জনসভাকে সুন্দর ও সু-শৃংঙ্খল করতে প্রায় শেষ হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ।
ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মেয়াদের দুই মাস আগেই শেষ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানার নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন কার্যক্রমও সম্পন্ন করেছে কারখানাটি। দৈনিক ২৮ শত মেট্রিক টন ও গড়ে বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে কারখানাটিতে।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বলেন, মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম মাঠে ৫০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা হলেও জনসভাকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর দলীয় সভানেত্রীকে সরাসরি দেখার সুযোগ হওয়ায় আনন্দিত দলীয় নেতাকর্মীরা।
পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। দায়িত্ব পালন করবে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে নরসিংদীকে ৭ স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধনের পর জনসভায় নরসিংদী জেলায় নবনির্মিত ও সমাপ্ত দশটি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এ দশটি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি শিক্ষা সংক্রান্ত এবং বাকি দুটি প্রকল্পের একটি স্থানীয় সরকার বিভাগ ও আরেকটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সংক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যে আমাদের সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ