মোঃ শাহাদাৎ হোসেন রাজু
হাতি একটি বন্যপ্রাণী। কোন সার্কাস পার্টি চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্ক ছাড়া সচরাচর নজরে আসে না বিশাল আকৃতির এই প্রাণিটি। বর্তমান সময়ে নরসিংদীর বিভিন্ন রাস্তাঘাটে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে সার্কেল বন্ধ থাকায় হাতির মালিকরা এই হাতিগুলোকে ব্যবহার করে এক প্রকার চাঁদাবাজিতে রাস্তায় নেমেছে। মালিকরা বলছেন হাতির খাবারের জোগান দিতে মানুষের কাছ থেকে ২/৪ টাকা চেয়ে নিচ্ছে তারা। অপরদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ বলছেন কোন একজন ব্যক্তির পক্ষে হাতি লালন পালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়।
এক সময় মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সার্কাস। কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে এই শিল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া সার্কাস পার্টির হাতি এবং এর মালিকরা হয়ে পড়েছে বেকার ফলে এদের বিপুল পরিমাণ খাবার জোগান দিতে বাধ্য হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষের কাছ থেকে এর খাবারের জন্য চাঁদা তুলছে তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দোকানপাটে ও রাস্তা-ঘাটে মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করে হাতি দিয়ে অভিনব কায়দার চলছে চাঁদাবাজি। হাটবাজার রাস্তা-ঘাটে খোঁজ নিয়ে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের কাছে হাতির চাঁদাবাজির কথা জানা যায়। শুধু হাট বাজার নয় ঢাকা-সিলেট মহা-সড়কসহ যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে দাঁড় করিয়ে টাকা আদায়ের কারণে বিড়ম্বনায় পড়েছেন পথচারিরা। হাতি শুঁড় দিয়ে মানুষ ও যানবাহন থামানোর কারণে ভুক্তভোগীরা ভয়ে ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিছুতেই কমছে না হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির এই দৌরাত্ম। জেলার কোনো না কোনো এলাকায় প্রায়ই চোখে পড়ছে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির এমন দৃশ্য। নতুন এই চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।
এদিকে, হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি থেকে নিস্তার নেই পথযাত্রীদের। আবার হাতির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটও। পথচারীদের কেউ কেউ হাতির আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। হাতির কারণে শিক্ষার্থীরা ও যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি নরসিংদী জেলা শহরসহ পলাশ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার এবং সড়কগুলোতে চোখে পড়ে হাতি দিয়ে চাঁদাবজির এমন দৃশ্য। রাস্তার দুই পাশে থাকা দোকান ও বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে চাঁদা তুলছে। এমনকি রাস্তায় হাতি দিয়ে গাড়ি আটকে ও প্রতিটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করে। চাঁদাবাজির এই দৌরাত্ম থেকে বাদ পড়ছে না অটোরিকশাগুলোও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীসহ এলাকার সাধারণত জনগণ।
মামুন নামে একজন দোকান মালিক বলেন, কয়েকদিন পর পর হাতি দিয়ে চাঁদা নিতে আসে। হাতি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালে ক্রেতারা ভয়ে দোকানে ঢুকতে সাহস পায় না। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। যাতে হাতি তাড়াতাড়ি দোকানের সামনে থেকে চলে যায়।
আইনুল নামে অটোরিকশা চালক বলেন, ‘কি আর কমু কয়দিন বাদে বাদে হাতি দিয়া চাঁদা তুলতে দেখা যায়। রাস্তা আটকাইয়া টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে অটো ওল্টাইয়া দেওয়নের ভয় দেখায়। পেসেঞ্জারসহ যদি সত্যি সত্যি অটো ওল্টাইয়া এই ভয়ে টাকা দিয়া চইল্যা যাই।’
রুবেল নামের এক পিকআপ চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তায় মাঝে মধ্যেই হাতির চাঁদাবাজির কবলে পড়তে হয়। টাকা না দিতে চাইলে হাতি গাড়ির সামনে থেকে সড়ে না।
গফুর শেখ নামের এক পথচারি জানান, হাতিকে কমপক্ষে ১০ টাকা করে দিতে হয়, কারণ ১০ টাকা না দিলে হাতি শুঁড় দিয়ে চেপে ধরে। ১০ টাকার কম দিলে তা গ্রহণ করে না। নূন্যতম ১০ টাকা দিলে হাতিটি পিঠে বসে থাকা মালিককে শুঁড় উঁচিয়ে টাকা দিয়ে রেহাই নিতে হয়।
হাতির মালিক কাশেম মিয়া বলেন, আগে যখন সার্কাস ছিলো তখন এই হাতি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় ঘুরতাম এবং এই হাতি দিয়াই আমাদের রুটি-রুজি চলতো। এখন আর সার্কাস নাই আমগো রুটি-রুজিও বন্ধ হইয়া গেছে। তার উপর হাতি এতো খাওন জোগামু কইথ্যাইক্যা। তাই মানষ্যের কাছ থেইক্যা দুই-চাইর টাকা খুঁইজ্যা লই।’
তবে হাতির মালিক বলেন, কাউকে জোর করে টাকা আদায় করা হয় না। লোকজন স্বেচ্ছায় যা দেয়, তা’ই নেওয়া হয়।
জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: হাবিবুর রহমান খান বলেন, হাতি একটি তৃণভোজি প্রাণি। এই হাতি যখন তার নিজস্ব আবাসে থাকে তখন সে ঘুরাঘুরি জন্য অনেক জায়গা পায়। আর যখন সে কোন একজন মানুষের বাড়ীতে থাকে তখন সেই পর্যাপ্ত জায়গা আর পায়না। আর একটি হাতি যে পরিমান খাবার খায় তার জোগান দেওয়া একজন ব্যক্তির জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এই বিপুল পরিমাণের খাবারের জোগান দেওয়া কোন ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব প্রায়। শুধু তাই নয় এর পরিচর্যা ও রক্ষাবেক্ষণ অনেক কষ্টকর। তবে আগে যে পর্যায়ে হাতি পালন করা হতো অর্থাৎ সার্কাস পার্টিতে সেখানে ওই সার্কাস পার্টিই তার খোর-পোষ করতে। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই।
জেলার বেশকয়েকটি বাজারের প্রতিটি দোকানে দোকানে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির এমন দৃশ্য ক’দিন পরপরই দেখা যায়। সচেতন মহলের বলেন এটা এক ধরণের চাঁদাবাজি। এটা দেখার যেন কেউ নেই। রাস্তা বন্ধ করে এরা তো একধরণের নৈরাজ্য চালাচ্ছে। কেউ তাদের কিছু বলতে পারছে না কেন?