আজ ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নরসিংদীতে আ’লীগের সম্মেলনে সহিংসতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা

মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু

ব্যাপক উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, বিশৃংখলা ও সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর আজ শনিবার নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম মাঠে দুপুর ২টায় এ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলন ঘোষনার পর থেকে জেলার রাজনীতির অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সম্মেলনকে ঘিরে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে সম্মেলনকে ঘিরে পদ-পদবীর আশায় জেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

দলীয় অনেক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূল থেকে উঠে আসা পদবঞ্চিত জেলার অধিকাংশ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের সাংসদ লে. কর্ণেল (অব:) মো. নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক’র নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ। আর এই গ্রুপটিকে সমর্থন জোগাচ্ছে জেলার প্রবীণ নেতা সাবেক মন্ত্রী, নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) থেকে ৬ বার’র নির্বাচিত রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এমপি। অন‍্যদিকে বর্তমান সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের নেতূত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাথে নিয়ে অপর গ্রুপটির নেতৃত্বে দিচ্ছেন নরসিংদীর সাবেক মেযর, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল। আর তাকে সমর্থন দিচ্ছে পলাশের সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন, তার ভাই বর্তমান এমপি ডা. আনোয়াারুল আশরাফ খান দিলীপ। তাছাড়াও রয়েছে শিবপুরের এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়াা মোহন।

সবগুলো গ্রুপই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জনবল জড়ো করে নিজেদের সমর্থনে মহড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। ধারণা করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাাকর্মীদের সংখ্যা লাখ ছেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে গেলে আশপাশে রাস্তায় নেতাকর্মীদের অবস্থান নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে আজ শনিবার এসএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দূর্ভোগে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক অভিভাবক। সম্মেলন দুপুর দুইটা নাগাদ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই সম্মেলন স্থলে আসা শুরু করবে। এ কারণেই এসএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রতিটি ক্ষেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। সম্মেলনস্থলের আশপাশে ব্রাহ্মন্দী কেকে এম উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মন্দী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নরসিংদী আইডিয়াল স্কুল ও বিয়াম জেলা স্কুলে এই ৪টি কেন্দ্রে প্রায় দেড সহস্রাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিবে।

এব্যাপারে নরসিংদী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র জানান, এ বিষয়ে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরীক্ষার্থীদের চলাচলে যেন কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের সাথে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।

পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম জানান, সম্মেলনে আইন শৃংখলা রক্ষায় বেশ কয়েক দফা সভা করা হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে যারা নেতৃত্ব দিবে তাদেরকে কোন রকম বিশৃংখলা না ঘটনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও অনুরোধ জানিয়েছেন। সম্মেলনের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সম্মেলনস্থলে কয়েক স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও ডোন ক্যামেরাও মনিটরিংয়ে থাকবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে সকাল ১০টার পরিবর্তে দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে দুটি গ্রুপের অস্তিত্বের লড়াই বলে মনে করছে দলীয় অনেক নেতাকর্মীরা।

সম্মেলনকে ঘিরে জেলা জুড়ে উৎসবের আমেজ থাকলেও ভীতি কমছে না নেতাকর্মীদের মাঝে ।সম্মেলন উপলক্ষে এক দিকে যেমন দলীয় নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন তেমনি দলীয় গ্রুপিং ও কোন্দলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা । গত বেশ কয়েক মাস ধরে উত্তপ্ত নরসিংদীর রাজনীতি। বিবাদমান দুটি গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ-মিছিলে জেলা আ’লীগের রাজনীতি এখন উত্তেজনায় ভরপুর। শুধু তাই নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যম ফেইসবুকেও একটি গ্রুপের সমর্থকরা অপর গ্রুপের নেতাদের নামে ছড়াচ্ছে কুৎসা।

দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি গ্রুপ আলাদা প্লাটফর্মে এসে পাল্টাপাল্টি এবং মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পৃথক ভাবে দলীয় কর্মসূচি গুলো পালন করে আসছে। শুধু তাই নয় খোলা মঞ্চে একে অপরের পরনিন্দা, পরচর্চাসহ একে অন্যের কুৎসা ছড়াতে দ্বিধাবোধ করেনি। যার ফলে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে অনেক তৃণমূলের নেতাকর্মী মনে করেন। এছাড়াও নিজেদের বলয় মজবুত করতে এবং পরবর্তী সম্মেলনে নিজেদের পাল্লা ভারী করতে ও সমর্থন পেতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও শহরের ওয়ার্ডগুলোতে আলাদা আলাদা কাউন্সিল করে অনুসারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করে। যা দলীয় গঠনতন্ত্র বহির্ভুত।

সম্মেলনকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ নরসিংদী শহর ছেয়ে গেছে নেতাদের ছবি সংবলিত তোরণে। এছাড়াও বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সমন্বিত বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন। দলের হাই-কমান্ডের নজরে আসতে চলছে প্রচার-প্রচারণা সেই সাথে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নরসিংদী শহরের আশপাশ।

সভাপতি পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে। তারা হলেন- নরসিংদী-১ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক), নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন, নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁইয়া, সাবেক পৌর মেয়র ও বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ঞ গোম্বামী, সাবেক যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান খোকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক একজন নেতা বলেন আজকের এই সম্মেলন এমপি নজরুল ইসলাম হিরু ও মেয়র কামরুলের জন্য অস্তিত্বের ও রাজনীতিতে টিকে থাকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পদ পেলেই তারা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে নয়তো ছিটে পড়ে যাবে। তাই আজকে সম্মেলন তাদের দুজনের জন্য বাঁচা মরার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ