জামায়াত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতা
খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর রায়পুরায় মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন এর বিরুদ্ধে নানাহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দক্ষিণ মির্জানগর গেলে এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন এলাকার কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও সার্বক্ষণিকভাবে জামায়াত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষকে তিনি জামায়াত সহ অন্যান্য দলের অফিস কক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তিনি দলীয় নেতাকর্মী বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাউকেই কোনোরূপ মূল্যায়ন করেন না। বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে তিনি একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এব্যাপারে এলাকার কারো পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না তিনি।
প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে কাউছার ভূঁইয়া নামে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছেন । কিন্তু কাউছার ভূঁইয়ার সন্তানের বয়স এখনো চার বছর পূর্ণ হয় নি অবগত করান এলাকাবাসী। এ অবস্থায় তার সন্তান বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মত এখনও বয়স হয়নি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন তার পছন্দের কাউছার ভূঁইয়াকে সভাপতি নির্বাচিত করার লক্ষ্যে তার সন্তানের বয়স ৪ বছর না হওয়া সত্ত্বেও কৌশলে ভর্তি করিয়ে নেন। এলাকাবাসী এর তথ্য প্রমাণাদি প্রতিবেদকের কাছে দেন।
দক্ষিণ মির্জানগর ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষকে তিনি জামায়াতের অঘোষিত অফিসে রূপান্তরিত করে রেখেছে। সে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের কোনোরূপ মূল্যায়ন করে না। বিদ্যালয়ের কোন কাজেই তিনি এলাকার নেতৃস্থানীয় কাউকে ডাকে না। তিনি তার পছন্দ অনুযায়ী লোক নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। তার স্বেচ্চাচারীতা ও একক সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে এলাকার সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের বই উৎসবে অতিথি আসনে(লাল বৃত্তাকার চিহ্ন) আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি
ছাত্রজীবন থেকেই সে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। পর্যায় ক্রমে জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন বর্তমানে এবং ওনার বেতনের সিংহভাগ অর্থ জামায়াত-শিবিরের পেছনে ব্যায় করে থাকেন।
তার এসকল কর্মকাণ্ডের ফলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
দক্ষিণ মির্জানগর আছমতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বলেন, এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও বালিকা বিদ্যালয়সহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে যারা জড়িত যেমন-বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব ভূঁইয়া, নুরুজ্জামান ভূঁইয়া এধরনের ও স্থানীয় প্রতিনিধি কাউকেই প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বিদ্যায়লের উন্নয়ন মূলক কোন কর্মকান্ডে খুব একটা ডাকেনা। । তাছাড়া তিনি জামাত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ও স্থানীয় প্রতিনিধি কাউকে পাত্তা দেয় না। বিগত কিছুদিন পূর্বে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য কাউকেই দাওয়াত বা চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়নি বলেও জানান তিনি। একজন প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়াসহ শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি হাসনাবাদ আছেন বলে জানান।
ঠিকানা মত সেখানে উপস্থিত হয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাই বিদ্যালয়ের ভালোমন্দ বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ততো আমাকেই নিতে হবে। আর বিদ্যালয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন বা তাদের পরামর্শ নিতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে মর্মে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান তিনি।
জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি কখনোই জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে আমি তাবলীগ জামাতের সাথে বিভিন্ন সময়ে চিল্লায় গিয়েছি।
বর্তমানে প্রস্তাবিত সভাপতি কাউছার ভূঁইয়ার সন্তানের বয়স কত জানতে চাইলে তিনি বলেন চার বছরের উপরে। পরে তার জন্মনিবন্ধন সনদ দেখতে বলা হলে তিনি বলেন, টিকা কার্ড দিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে।কিন্তু টিকা কার্ড বা বয়স সংক্রান্ত কোন প্রকার প্রমানাদি তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন।
এব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হোসেন বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।