আজ ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাল দলিল সৃজন করে অধি গ্রহনের বিল তুলে নিলেন ট্রেজারী কর্মচারী হামদু ভূইয়া

খাসখবর প্রতিবেদক

জাল দলিল সৃজন করে ব্যবসায়ী সেজে জমি অধিগ্রহনের বিল তুলে নিলেন নরসিংদী জেলার হিসাব রক্ষন কর্মচারী হামদু ভূইয়া। ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুড়া ইউনিয়নের আটপাইকা মৌজায় ও গ্রামে। এই ব্যাপারে সম্পত্তি প্রকৃত বৈধ মালিক হিসেবে জেলা প্রশাসক এর বরাবরে ৩০ শে সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সেলিম মিয়া।

সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ভুক্তভোগী সেলিম মিয়া জানান, আট পাইকা মৌজায় এস.এ ও আর.এস- ২০২ খতিয়ানে এস.এ- ৪২১নং আর.এস- ৬৭০ দাগের সম্পত্তিতে আমার দাদা ছমির উদ্দিন জোত স্বত্বে মালিক থাকিয়া এক পুত্র তাইজ উদ্দিন ও দুই কন্যা ওয়ারিশ রাখিয়া মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর তাইজ উদ্দিন পৈত্রিক সূত্রে মালিক দখলকার থাকিয়া মৃত্যুবরণ করিলে সে মোতাবেক আমি পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা প্রাপ্ত হইয়া ভোগ দখলে বিদ্যমান ছিলাম। কিছুদিন পূর্বে জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হলে সেখানে উপস্থিত হয়ে কর্মরত শ্রমিকদের বাধা দিলে তারা জানায় এ জমি সরকার অধিগ্রহন করে নিয়েছেন। এ ব‍্যাপারে ডিসি অফিসে যোগাযোগ করার কথা বলেন তারা। অত:পর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ডিসি অফিসের এল.এ শাখায় যোগাযোগ করলে জানতে পারি সরকার এ জমি অধিগ্রহন করে নিয়েছে ইতোমধ‍্যে এর বিলও উত্তোলন করা হয়েছে। এল.এ শাখার তথ্য মতে বিল উত্তোলনকারী নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার দড়িচর গ্রামের আবুল কাশেম ভূইয়ার পুত্র হামদু ভূইয়া। যিনি জেলা হিসাব রক্ষন শাখার একজন কর্মচারী।

এল. এ শাখার জমির মালিকানা জানতে চাইলে সার্ভেয়ার জানান, ১০৪৮৫/৭৩ দলিলে ছমির উদ্দিন চান মিয়ার বরাবরে রেজিষ্ট্রি করিয়া দেন। বিল উত্তোলনকারী হামদু ভূইয়া উক্ত চান মিয়ার নিকট হইতে বিল এওয়াজ হেবা দলিল করে নেন। আমরা তথ্য পেয়ে জেলা মহাফেজ খানা হইতে ১০৪৮৫/৭৩ দলিলের অবিকল নকল সংগ্রহ করি। যাহা নরসিংদী শহরের সড়ক ব্রাহ্মন্দী মৌজা। এই দলিলের গ্রহিতা আলী আকবর ভূইয়া, পিতা- দানিছ ভূইয়া। দাতা – শ্রী মন মোহন ভূইয়া, পিতা- কৃষ্ণ মোহন ভূইয়া এই অবিকল নকল নিয়ে আমরা পুনরায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এল.এ শাখায় স্বরনাপন্ন হয়ে আমাদের নকলটি ওই শাখার কর্মকর্তাদের দেখাই। অবিকল নকলে আমার দাদা ছমির উদ্দিন কাউকে এই সম্পত্তি দান করেন নি। এব‍্যাপারে আমাদের করনীয় কি জানতে চাইলে সার্ভেয়ার আমাদের আইনী সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেন।
অতঃপর হামদু ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করতে হিসাব রক্ষণ অফিসে গিয়ে তার স্বরনাপন্ন হয়ে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। এতে হামদু ভূইয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনারা সাব রেজিষ্ট্রার, এসিল্যান্ড, নায়েবের বিরুদ্ধে মামলা করেন।’
বিষয়টি পুনরায় বুঝানোর চেষ্টা করলে রেগে বলেন. ‘এখন অফিস থেকে বের হয়ে যা, নতুবা তোদেরকে পুলিশে দিব। কিছু করার থাকলে বিমলের নামে গিয়ে কর।’ আমি নত স্বরে বিমলের পরিচয় জানতে চাইলে উনি বলে আমার আগের অফিসার।

উপায়ান্ত না দেখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর আমি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। পরবর্তীতে সৃজনকৃত উক্ত ১০৪৮৫/৭৩ দলিলের দাতা চাঁন মিয়ার বাড়িতে গেলে উনাকে বাড়িতে পাওয়া যায় নাই। এলাকাবাসী বলে চাঁন মিয়া ফকির মানুষ। মাজারে মাজারে থাকে। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি অনেক আগে বিক্রয় করিয়া নিঃস্বত্ববান হইয়াছিলেন।
ছমির উদ্দিন চাঁন মিয়াকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে এমনটা জানতে চাইলে এলাকাবাসী বলেন, চাঁন মিয়াকে জমি দান করেছে বা ভোগ দখলে ছিল এই রকম তথ্য আমাদের জানা নাই। চাঁন মিয়াকে কোন দিন জমি চাষ করতে দেখি নাই। চাঁন মিয়ার বিক্রি করার মত কোন সম্পত্তি নেই।

এই ব্যাপারে অভিযুক্ত হামদু ভূইয়ার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কোন রিসিভ করলেও তার দিক থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে হামদু ভূইয়ার অফিসে স্বাক্ষাতের জন্য উপস্থিত হলে রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে গোয়েন্দা এনে গ্রেফতার করে দিবে বলে হুমকী প্রদান করে।

এখানে উল্লেখ‍্য যে, বিল উত্তোলনকারী উক্ত হামদু ভূইয়া চাকুরী জীবি হয়ে দলিলে পেশা ব্যবসা লিখে সরকারী কর ফাঁকি দিয়ে আত্মীয় সম্পর্ক না থাকলেও বিল এওয়াজ হেবা দলিল করে। যাহা আইন বহির্ভূত। টিআইএন এ এই অর্থ জমা দিলে সরকারী কোষাগারে রাজস্ব দিতে হবে বলে তিনি প্রজাতন্ত্রের সরকারী কর্মচারী হয়ে দলিলে পেশা- ব্যবসা লেখেছে। এতে করে সরকারী স্বার্থ নষ্ট হয়েছে। এতে করে জমির প্রকৃত মালিক বঞ্চিত হয়েছেন।

এব‍্যাপারে যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে তাদের ন‍্যায‍্য পাওনা ফিরে পাওয়ার জোড় দাবী জানিয়ছেন অভিযোগকারী সেলিম মিয়া।

# চলবে #

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ