আজ ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আলোকবালীতে গ্রেফতার আতঙ্কে ৫টি গ্রাম পুরুষ শূণ‍্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

নরসিংদীর আলোকবালীর নেকজানপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় ৩ জনের মৃত্যূর ঘটনার পর থেকে ইউনিয়নের ৫ টি গ্রাম প্রায় পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার এড়াতে বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াছে ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পুরুষ মানুষ। দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যূর ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডঃ আসাদ উল্লাহসহ প্রত্যেকটি গ্রামে তার সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আসামী করে প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামীদের স্থলে নাম অন্তর্ভুক্ত করার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এলাকার একটি চাঁদাবাজ চক্র।

অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে আলেকবালী ঘুরে অনেকটা নিরব-নিস্তব্দ অবস্থায় দেখা যায় ইউনিয়নটিকে। ইউনিয়নের কাজিরকান্দি, নেকজানপুর, মুরাদনগর, সাতপাড়া ও খোদাদিলা এই গ্রামগুলোকে প্রায় পুরুষ শূণ‍্য অবস্থায় দেখা যায়।

এসব গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার চারদিক নদী বেষ্ঠিত প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়ন। দ্বিতীয় ধাপে গত ১১ নভেম্বর এই ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিপু, ও সাধারণ সম্পাদক এডঃ আসাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। দলীয় হাই কমান্ড নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেলোয়ার হোসেন দিপুকে মনোনয়ন প্রদান করেন। এদিকে এডঃ আসাদ উল্লাহ’র মনোনয়ন বঞ্চিতের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি তার কর্মী-সমর্থকরা। এডঃ আসাদ উল্লাহকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দাবী তোলে কর্মী-সমর্থকরা। তাদের দাবীর মুখে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করে। দলের প্রতি আস্থাশীল ইউনিয়ন আ’লীগের এই নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

গত ৪ নভেম্বর আলোকবালী ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫ নং ওয়ার্ডের দুই সদস্য পদপ্রার্থী রিপন মোল্লা ও আবু খায়ের’র কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়। ওই নির্বাচনী সহিংসতায় ৩ জনের মৃত্যূর ঘটনায় মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ১৫০জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামী রাখায় মামলায় জড়ানো আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো আ’লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী এডঃ আসাদ উল্লাাহ’র কর্মী-সমর্থকরা। ফলে নির্বাচনের আগেই ইউনিয়নের সবকটি গ্রামের প্রায় ২ হাজার পুরুষ বাড়ী ছাড়া হয়।

এদিকে বাড়ী ছাড়া এ মানুষদের দুর্বলতার সুযোগে মতিন মেম্বার, সফিক মেম্বার,আইয়ুব আলী মেম্বার ওই নিরীহ মানুষদের অজ্ঞাত নামা আসামীদের স্থলে অন্তর্ভূক্ত করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

মামলা আতঙ্কের কারণে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়া গ্রামগুলোর হামলা ও লুটপাটের শিকার বিভিন্ন বাড়ী ঘুরে পলাতক থাকা গৃহকর্তাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তাদের সাথে কথা বললে-

খোদাদিলা গ্রামের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী মাঠে যাতে না থাকতে পারি সেজন্য নির্বাচনের আগের দিন পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমাকে ও আমার সমর্থকদেরকে বাড়ী ছাড়া করে এবং আমার বাড়ীতে লুটপাট করে।

মুরাদনগর গ্রামের ডা: আলাউদ্দিন বলেন, মুরাদনগর বাজারে আমার ঔষধের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আমাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়।

উত্তরপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য প্রার্থী জব্বর মিয়ার স্ত্রী বলেন, এতদিন ওরা কিছু বলেনি। নির্বাচনে পাশ করেই সেই রাতে বাড়ীতে এসে হুমকি-ধমকি দেয়। এসময় আমার আমার ঘরে ভাঙচুর চালায় এমনকি রান্নাঘরে র উনূন পর্যন্ত ভেঙ্গে দেয় তারা। বাডীতে থাকলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রাণের ভয়ে অবুঝ সন্তানদের নিয়ে বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।

আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড: আসাদুল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আমাকে ও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিচার দাবি জানান তিনি।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ