আবুল কাশেম, আলোকবালীী
নরসিংদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালীতে ইউপি নির্বাচন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সাতপাড়া গ্রামের মৃত সুরুজ খানের ছেলে শাহা আলম মিয়া (৪৫) ও মৃত ফজল মিয়ার ছেলে মো. কাইয়ুম (৩০)। তারা উভয়েই অওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু’র সমর্থক। এসময় আরও তিনজন আহত হযেছে বলে জানা যায়।
পুলিশ, চিকিৎসক ও স্থানীয় সূত্রে জান যায় , আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুইজনই দলীয় মনোনয়ন চান। বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু দলীয় মনোনয়ন পেলেও আসাদুল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আসাদুল্লাহ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পর তা প্রত্যাহারও করে নেন তিনি। এদিকে দুপুরে ইউনিয়নের সাতপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং গোলাগুলি শুরু হয় । এ সময় আসাদুল্লাহ সমর্থকদের গুলিতে বিদ্ধ হন শাহ আলম খান ও কাইয়ুম মিয়া। আহত অবস্থায় তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নে্ওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের শরীর থেকে গুলি বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাদিরুল আমিন জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এসময় কাইয়ুম নামে একজনের বাম কাধ থেকে ও শাহা আলম নামে অপরজনের বাম হাত থেকে দুটি গুলি বের করা হয়। পরে তাদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ করেনি বলে জানায় পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এডভোকেট মো. আসাদুল্লাহ বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এত দিন নির্বাচনের মাঠে থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আজ শেষ দিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ নিয়ে সারা দিন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যস্ত থাকায় এলাকায় সংঘটিত সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে ঘটনা শুনেছেন, কারা এতে জড়িত জানেন না।
এ ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে কী না তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি। এ ঘটনায় কোন পক্ষ অভিযোগ করেনি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোকবালীতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।