শেখ জাহাঙ্গীর আলম
নরসিংদীর মাধবদীতে বহুল আলোচিত আমিরজান হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের জন্য নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)তে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এ মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। ধার্যকৃত দিনে নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা আহমেদ মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য ডিবিতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
গত বছর এ হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী আমিরজানের স্বামী হোসেন আলী মাধবদী থানা পুলিশের প্রতিবেদন (চার্জশিট) এর বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছিলেন বলে জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার আতাউর রহমান।
মামলা সূত্রে ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত বছরের ৩১ জানুয়ারী নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন মৈষাদী গ্রামের প্রবাসী রফিকুল ইসলামের ছেলে মোশাররফ হোসেন অনিকের (১৮) সাথে একটি আমগাছ কাটা নিয়ে তার দাদী আমিরজান (৫০)’র কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অনিকের স্বজনরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।এসময় উত্তেজিত হয়ে অনিক তার দাদীকে মারধর করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এতে বাঁধা দিতে আমিরজানের স্বামী হোসেন আলী এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরদিন দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমিরজানের মৃত্যু হয়।
হোসেন আলী নিরীহ ও সহায়সম্বলহীন হওয়ায় ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে একটি মহল তৎপর হয়ে উঠে। পরে স্বামী হোসেন আলী বাদী হয়ে নাতী মোশাররফ হোসেন অনিক (১৮) সহ চারজন ও আরও অজ্ঞাত আসামী করে মাধবদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় মাধবদী থানা পুলিশ নিহত আমিরজানের সৎ ছেলে রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ও মোশাররফ হোসেন অনিকের মা হাফেজা (৪০), অনিকের চাচা মোস্তফা (৩৫) ও অনিককে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত থেকে অনিক বাদে তিনজন জামিনে মুক্তি পায়।
এ মামলায় সঠিক তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবিতে একাধিক মানববন্ধন করাসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন নিহতর স্বামী ও স্বজনরা।
নিহত আমিরজানের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক রনি বলেন, ‘আমি আমার মাকে হারিয়েছি! মা হারানোর ব্যাথা একমাত্র যারা হারিয়েছেন তারাই বুঝতে পারে! এ হত্যাকাণ্ডের এক আসামী মোশাররফ হোসেন অনিক কারাগারে রয়েছে আরও তিনজন জামিনে রয়েছে। মায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদলাতের শরণাপন্ন হয়েছি। এ মামলাটি মাধবদী থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালত কিন্তু তারা সঠিকভাবে তদন্ত করেনি। মাধবদী থানা পুলিশের তদন্ত সন্তোষজনক না হওয়ায় পুনঃরায় তদন্তের জন্য সিআইডিতে দেয়ার জন্য নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালতে নারাজি দিয়েছিলেন আমার বাবা হোসেন আলী। অবশেষে দীর্ঘ একবছর পর পুনঃতদন্তের জন্য নরসিংদীর ডিবিতে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালত। আমার মায়ের হত্যার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের সর্বচ্চো শাস্তির দাবি জানাই।’