আজ ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমাদের সন্তানাদির কেমন পোশাক পড়া উচিৎ!

মো. শফিকুল ইসলাম

গত ১৮ মে বুধবার ভোরে নরসিংদী রেলস্টেশনে জিনস প্যান্ট ও টপস পরার কারণে একজন মেয়ে হেনস্তার শিকার হন। জানা গেছে মেয়েটি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। নরসিংদীতে এসে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হবে এটা হয়ত তার কল্পনাতে ছিলনা। বিভিন্ন মিডিয়ার সাহায্যে এটা স্পষ্ট মেয়েটিকে হেনস্থায় মূল হোতা একজন মহিলা, নাম মারজিয়া আক্তার, বয়স ৬০ এর কোঠায়। ঘটনার সময় হয়ত মারজিয়া আক্তার নিজেকে সামলানোর চাইতে প্রতিবাদটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

প্রত্যেক বাবা-মা’ই চায় সন্তান যেন ভাল থাকে, সব সময়, সব জায়গায়। হয়ত মায়ের এমন মন মানষিকতা থেকেই তিনি এমনটা করেছেন।

এ ঘটনায় হেনস্তার শিকার মেয়েটির পক্ষে প্রথম ১৮ মে রবিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইনি সহায়তা দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠন দুটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানায়।

এরপর ২৭ মে শুক্রবার সকালে নারী হেনস্তার প্রতিবাদে আধুনিক পোশাক পরে রেলস্টেশন ভ্রমণ করেছেন ঢাকা থেকে আগত প্রায় ২০ জনের একটি নারী দল। এই ভ্রমণের নাম দিয়েছেন তারা ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’। রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী তারা। অগ্নিযাত্রায় এই নারীরা তাদের পছন্দমতো আধুনিক পোশাক পরিধান করে ছিলেন। সম্ভবত এটাও টিপ কান্ডের পর বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভিন্ন একটি প্রতিবাদ।

এ ধরণের প্রতিবাদ দেশের মানুষ এর আগে কখনো দেখেনি। যদিও দেখার প্রয়োজন ছিলনা। যাই হউক এ ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে পরের প্রতিবাদগুলো ছিল গতানুগতিক, যা দেশের মানুষ দেখছে।

গত ২ জুন বৃহস্পতিবার নরসিংদীতে মারজিয়া আক্তারের পক্ষে ও বিপক্ষে মানববন্ধন হয়। এক পক্ষ সর্বোচ্চ শাস্তি আর অন্য পক্ষ নিঃস্বার্থ মুক্তি দাবী করেছে।সোশ্যাল মিডিয়ায়ও পক্ষে-বিপক্ষে এর বিস্তর প্রতিবাদ লক্ষণীয় । এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় রেলওয়ে থানায় মামলা করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী।

গত ২৯ মে রাতে মারজিয়া আক্তারকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্রফতার দেখিয়ে, নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। এখন আদালতের রায়ের অপেক্ষা।

ইসলাম ধর্মে নারীর পোশাক সম্পর্কে মহানবী (সঃ) এর একটি বাণী উল্লেখ করা যায় – মহানবী (সঃ) বলেছেন “দুই শ্রেণীর দোজখ বাসীকে আমি এখনো দেখিনি। ( অর্থাৎ পরবর্তী সময়ের সমাজে এদের দেখা যাবে)-

> এক শ্রেণী হলো- ওই সব নারী, যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ। যারা নিজেরা পথচ্যুত এবং অন্যদেরকেও পথচ্যুত করবে। এদের মাথা হবে উটের পিঠের চুটির মতো ঢং করে বাঁকানো। এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের খুশবুও তারা পাবে না”।
(মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

সনাতন ধর্মেও পোশাক সম্পর্কে বলা হয়েছে “”হে পুরুষ ও নারী তোমাদের দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনত। তোমাদের চলন হোক সংযত, দেহ হোক পোশাকে আবৃত,নগ্নতা হোক পরিত্যাজ্য।” ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯।

বাংলাদেশের মানুষ খুবই ধর্ম পরায়ন- সে হউক মুসলিম কিংবা হিন্দু বা অন্য যে কোনো ধর্মের।
সংবিধানের ৫ম সংশোধির ১১২ অনুচ্ছেদে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূল নীতির অন্যতম হলো ধর্মীয় নিরপেক্ষতা। যা সংবিধানে ইতোমধ্যে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না।

গত ১৮ মে’র ঘটনায় নরসিংদী এখনো উত্তাল, পক্ষে-বিপক্ষ আন্দোলন, আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছেই। তবে সুশীল মানুষের বক্তব্য হচ্ছে এধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে।

ভবিষ‍্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদেরকে এখনই সজাগ হতে হবে। আর পদক্ষেপটা নিতে হবে পরিবার থেকেই। বাবা-মায়েরাই ঠিক করতে সন্তানেরা কেমন পোশাক পরে রাস্তায় বের হবে।

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ