খাসখবর প্রতিবেদক
‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’, ফিরে এল আজ সেই মোহররম মাহিনা…। আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। আরবি শব্দ আশারার অর্থ ১০। দিনটি আশুরা নামে পরিচিত। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনাবহুল এই দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে।
বাংলাদেশেও প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচিতে পবিত্র আশুরা পালিত হবে। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
আশুরা উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হিজরি ৬১ সালের ১০ মহরম মহানবি হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারবর্গ কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিবসটি পালন করা হলেও আরও বেশকিছু কারণে দিনটি গুরুত্বপূর্ণ বলে ইসলামি কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে। এতে বলা হয়েছে, এদিনে মুসা (আ.)-এর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে আল্লাহ রক্ষা করেন।
ফেরাউনকে তার গোটা বাহিনীসহ সাগরে ডুবিয়ে দেন। সম্মানের দিক থেকেও দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন এবং এর আগের বা পরের দিনসহ দুটি রোজা রাখলে আগের একবছরের গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন বলে হাদিসে এসেছে।
এছাড়া দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর এদিন আরাফাতের ময়দানে আদম (আ.) হওয়া (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ দিনে ঘটে বলে বিভিন্ন বর্ণনায় আছে। ইসলামে এমন গুরুত্বের জন্য দিনটি অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।
হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল রয়েছে। কারবালার শোকাবহ এ ঘটনা অর্থাৎ পবিত্র আশুরার শাশ্বত শিক্ষা সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ তাজিয়া মিছিল বের হবে। এই মিছিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
রবিবার ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাজিয়া মিছিলে দা, ছুরি, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি প্রভৃতি নিয়ে অংশগ্রহণ করা হয়, যা ক্ষেত্রবিশেষে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এটা ধর্মপ্রাণ ও নগরবাসীর মনে আতঙ্ক, ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাছাড়া মহররম মাসে পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তাজিয়া মিছিলের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক আজ বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলেও দিনটির তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার হবে।
শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাঁদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।