খাসখবর প্রতিবেদক
নরসিংদীর বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেন্ডার নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার দুইদিন পরও মামলা হয়নি। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দুই ঘন্টা বৈঠক করে ঘটনার সমঝোতা করেছেন স্থানীয় সাংসদ ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তাসহ বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হক কমল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত বুধবার হাসপাতালে উপজেলা সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপু সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তৌফিক এর নেতৃত্বে হামলার পর ওইদিনই ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০-৫০ জন দুস্কৃতিকারীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তা নূর আসাদুজ্জামান। এই ঘটনার দুইদিন পরও মামলা নথিভুক্ত হয়নি।
এদিকে হামলার ঘটনা নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস কক্ষে শুরু হয় সমঝোতা বৈঠক। এতে নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা জান্নাত তাহেরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রায়পুরা-বেলাব সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বিএমএ জেলা শাখার সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হক কমল, স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল হক অপু, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনিরুজ্জামান খাঁন, বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার খালেদাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক চলাকালে সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বৈঠক শেষে দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে শিল্পমন্ত্রী বের হয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা এগিয়ে গিয়ে বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি কোনকিছু না বলেই গাড়ীতে উঠে চলে যান।
সকালে শিল্পমন্ত্রী হাসপাতালে আসার আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা কর্মচারীরা “হাসপাতালে হামলায় জড়িতদের বিচার দাবিতে” লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন করে। বৈঠক চলাকালীন সময়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপুর কিছু সমর্থক হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে চাইলে এ সময় সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি খালেদ মাহমুদ পরশের সমর্থকরা তাদেরকে বাধা দেয়। এতে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এসময় খালেদ মাহমুদ পরশের সমর্থকরা বর্তমান কমিটির সভাপতিসহ হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দেখা যায়।।
বৈঠক শেষে বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হক কমল বলেন, হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে শিল্পমন্ত্রী মহোদয় এসে এই ঘটনাটির মিমাংসা করেছেন। হাসপাতালে ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় জড়িতদের ক্ষমা চাইয়েছেন।
এবিষয়ে জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালে হামলার অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে জানিয়ে কোন পুলিশ কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হাসপাতালটির খাদ্য ও পণ্য সরবরাহের দরপত্র আহবান করা হলে তা অন্য কেউ পেয়ে যাচ্ছে এমন খবরে গত বুধবার (১৬ নভেম্বর) উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী হাসপাতালে হামলা চালায়। এসময় হাসপাতালের সিসিটিভির তার কাটাসহ জানালার গ্লাস ও হাসপাতালের আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নূর আসাদ-উজ-জামান বেলাব থানায় ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপু ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তৌফিকসহ ৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক এবং অজ্ঞাত আরো ৪০/৫০ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ করেন।